বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাকে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, অনেক তথ্য-উপাত্ত আগে অন্য কোথাও না পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে পাওয়া যেত। এখন সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বর্তমান পরিস্থিতিতে তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে আমি আগে বলেছিলাম বাংলাদেশে তথ্য উপাত্তের নৈরাজ্য চলছে। তথ্য-উপাত্তের অন্ধত্ব এসেছে। এখন আমি বলব তথ্য উপাত্তের অপঘাত হয়েছে। এটার সর্বশেষ প্রমাণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।
তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অনেকেই বলেন বাংলাদেশের অনেক বড় গর্বের জায়গা আমরা কোনোদিন ঋণ খেলাপি হইনি। তাহলে পাঁচ বিলিয়ন তো দিতে পারছেন না দীর্ঘদিন হচ্ছে। তেল আমাদানি করেছেন তার টাকা দিতে পারছেন না, বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন তাদের মুনাফার টাকা দিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, আপনার সেই গর্বের জায়গা ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। অথচ এই তথ্য-উপাত্তগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসত, অথচ সেখানে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এখন ডালটা মুশুরের ডাল না কি মুগের ডাল বুটের ডাল না কি সব ডালেই সমস্যা হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন তার থেকে এটা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, এর আগে দেশের মধ্যে তথ্য-উপাত্তের নৈরাজ্য ছিল। এখন তথ্য-উপাত্তের অপঘাত হয়েছে। সবশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তারই প্রমাণ। জনমানুষ প্রত্যাশার জায়গা, তথ্য-উপাত্তের বড় স্তম্ভ বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা বিবিএসর তথ্যের আগেই রপ্তানি-আমদানিসহ আর্থিক সূচক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের ওপরে নির্ভর ছিলাম। এখন কেনো তথ্যের অপঘাত করা হলো, এতে সুনাম হানি ঘটবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তথ্য কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। আজ ব্যবসায়ীরা তথ্য পাচ্ছে অথচ সাংবাদিকরা পাচ্ছে না। ব্যবসায়ীকে তথ্য দিলেতো বাজার এর প্রভাব পড়ে, দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তার প্রবিধি দিয়ে সচ্ছতা-জবাবদিহিতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে পারে। তবে সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশ করতেই দেওয়া হচ্ছে না। কেনো তথ্য প্রকাশ হলে বড় ধরনের নাশকতা হবে? নাশকতাকারী কি অর্থনৈতিক সাংবাদিক?
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য-উপাত্তের শক্তিশালী জায়গা ছিল। বিশ্বাস যোগ্যতার বড় স্তম্ভ ছিল এটা। আমরা আমদা-রপ্তানিসহ অনেক তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরে নির্ভর ছিলাম। তথ্য কেনো দেওয়া হবে না, আবার দেওয়া হতেও পারে। হয়তো এক মাসের আগের তথ্যটা ৬ মাস পর দেওয়া হতে পারে। আগে তথ্য দেওয়া হতো আর এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে, না কি তারা কোনো উচ্চপর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনামহানী হবে।
সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন স্মরণে তিনি বলেন, ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সদ্যপ্রয়াত সম্পাদক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন পুরোপুরি পেশাদার ও পরিশুদ্ধ সাংবাদিক ছিলেন। সততা, নৈতিকতার সঙ্গে পুরোপুরি পক্ষপাতহীনভাবে সবসময় দায়িত্ব পালন করেছেন। আর অর্থনীতির সাংবাদিকতায় তিনি পুরোধা ছিলেন।
মন্তব্য করুন