ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) সরবরাহ করা মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানিতে জালিয়াতির ঘটনায় টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (২১ আগস্ট) ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে ওই তিন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিন কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান, প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা রাহাত আল ফয়সাল। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পিপিআর অনুযায়ী সব কাগজপত্র দেখে মূল্যায়ন হয়েছে কিনা এবং পিপিআর এর কোনো ব্যতয় হয়েছে কিনা- এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসকে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান জানান, তিনি এখনো শোকজের চিঠি হাতে পাননি।
এদিকে সোমবার রাতে জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানিতে প্রতারণার দায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছে ডিএনসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করিপোরেশনের পক্ষে মামলাটি করেছেন ডিএনসিসির সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. রাহাত আল ফয়সাল। মামলায় আসামি করা হয়েছে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলাউদ্দিন এবং নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিনকে।
এদিকে ব্যাকটেরিয়া আমদানি উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএনসিসি। এ কমিটির আহ্বায়ক ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন। ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক সরবরাহ কাজে (দরপত্র আইডি-৮১৩৮৩৪) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সরবরাহ করা ৫ হাজার কেজি বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরে উৎপাদিত এবং তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ করা বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরের উৎপাদিত এবং সরবরাহ করা নয় বলে ওই কোম্পানির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
সরবরাহ করা বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সিঙ্গাপুরে উৎপাদিত এবং সরবরাহ করা কিনা অবিলম্বে এতদসংক্রান্ত সব প্রমাণক দাখিলসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে পরপর ২টি চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। গত ১৭ আগস্ট মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের পাঠানো চিঠির বিষয়ে মশক নিধন কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি কারিগরি ও যাচাই কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করা বিটিআই পণ্যটি যে বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুরে উৎপাদিত এবং সরবরাহ করা হয়েছে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি।
এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিএনসিসির ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগের দাপ্তরিক ই-মেইল থেকে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিঙ্গাপুর থেকে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বিটিআই সরবরাহ করা হয়নি এবং মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ওই প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত পরিবেশক না।
এ ছাড়া মার্শাল অ্যাগ্রোভেট মি. লি কিয়াং যিনি বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিটিআই এক্সপার্ট ও রপ্তানি ব্যবস্থাপক বলে দাবি করেছেন, তিনি বেস্ট কেমিক্যালের কর্মচারী নন।
মন্তব্য করুন