রীতা রানী কানু, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রোদ-বৃষ্টিতে পচে নষ্ট মূল্যবান সরকারি গাছ

জেলা পরিষদের ফুলবাড়ী ডাকবাংলা চত্বরে ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে গাছের গোলাই। ছবি : কালবেলা
জেলা পরিষদের ফুলবাড়ী ডাকবাংলা চত্বরে ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে গাছের গোলাই। ছবি : কালবেলা

বন বিভাগের উদাসীনতাসহ সংরক্ষণের অভাবে দিনাজপুর জেলা পরিষদের ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে স্তূপাকারে পড়ে থাকা মূল্যবান বিভিন্ন গাছের গোলাই রোদ-বৃষ্টি ভিজে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

জানা যায়, কয়েক বছর ধরে মূল্যবান গাছের গোলাইগুলো ডাকবাংলা চত্বরে ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকালেও জেলা পরিষদ থেকে গাছের গোলাইগুলো সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পচে ৯৫ ভাগই গোলাইগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ গাছগুলো দরপত্রের (টেন্ডার) মাধ্যমে বিক্রি করা হলে সরকার বিপুল অঙ্কের অর্থ রাজস্ব পেতো। কিন্তু সেটি করা হয়নি।

দিনাজপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে কর্তনকৃত সংরক্ষিত ভূত কড়াই গাছের ১৩ খণ্ড, আকাশমির ৩ খণ্ড, অর্জুন ১৩ খণ্ড, কড়াই ১ খণ্ড, শিশু ৯ খণ্ড ও চম্পা গাছের ১ খণ্ড গোলাই গাছের মূল্য নির্ধারণসহ মতামত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে ১৪১৫নং স্মারকে জেলা পরিষদ থেকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দিনাজপুরকে চিঠি দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে ওইসব কাঠের মূল্য নির্ধারণসহ মতামত প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে জেলা পরিষদ দিনাজপুর এর কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলেও আজও সেই চিঠির উত্তর পায়নি জেলা পরিষদ। ফলে গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে পুনরায় চিঠি দিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

সরেজমিনের ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে দিয়ে দেখা যায়, ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে জেলা পরিষদের রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনার গাছগুলো কর্তন করে গাছের গোলাইগুলো জেলা পরিষদের ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে খোলা আকাশের নিচে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রাখা হয়। জেলা পরিষদ থেকে এসব গাছের গোলাই সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বছরজুড়ে গাছের গোলাইগুলোর ওপর দিয়ে রোদ-বৃষ্টি বয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই গোলাইগুলোর ৯৫ ভাগই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সরকার রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকলে সরকার রাজস্ব বিপুল অংকের অর্থ রাজস্ব পেত।

স্থানীয় কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী ও স’মিল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে পড়ে থাকা মূল্যবান গাছের গোলাইগুলো এখন মূল্যহীন হয়ে গেছে। পড়ে থাকা গোলাইগুলো জ্বালানি খড়ি ছাড়া অন্য কিছুই হবে না। এগুলো কেনার জন্য ক্রেতা পাওয়াও কঠিন হবে।

ফুলবাড়ী ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার ইস্রাফিল হোসেন বলেন, তিন বছর আগে জেলা পরিষদের বিভিন্ন রাস্তা ও স্থাপনায় থাকা আকাশমনি, শিশু, মেহগনি, আম, ইউক্যালিপটাস, ভুত কড়াইসহ বিভিন্ন গাছ কর্তন করে গাছের গোলাইগুরো ডাকবাংলো চত্বরে রাখা হয়েছে। শুনেছেন গাছের গোলাইগুলো টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত সেটি হয়নি বলেই সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা পরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছের মূল্য নির্ধারণ না হলে জেলা পরিষদ সেগুলো বিক্রি করতে পারে না। বন বিভাগের জন্যই এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, জেলা পরিষদ থেকে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তারিখের ১৪১৫ স্মারকের পাঠানো কোনো চিঠি দপ্তরে পাওয়া যায়নি। তবে গত ২ জুলাই তারিখে পাঠানো একটি চিঠি পাওয়া গেছে, সেটির বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ফুলবাড়ী ডাকবাংলো চত্বরে সংরক্ষিত গাছের গোলাইগুলোর মূল্য নির্ধারণসহ মতামত প্রতিবেদনের জন্য দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে ১৪১৫নং স্মারকে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সেই চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলেই গাছের গোলাইগুলো বিক্রির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। তবে গত ২ জুলাই জেপদি/এক-০৭ (বিরামপুর)/২০২৪-২৫/৫১৯ নং স্মারকে গাছের গোলাইয়ের মূল্য নির্ধারণসহ মতামত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দিনাজপর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে গাছের মূল্যনির্ধারণসহ মতামত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে গাছগুলো বিক্রির বিষয়ে আগামীতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিপির প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানাল ইশরাকের আইনজীবী 

ফিলিস্তিনিদের জন্য মালয়েশিয়াস্থ চট্টগ্রাম সমিতির অনুদান

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ / ভারতের প্রতি সমর্থন, তবে পাকিস্তান প্রসঙ্গে প্রমাণ চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ইস্যুতে অপপ্রচারে ব্রিটিশ এমপিদের উদ্বেগ 

আজ নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ

এআই আর্মস রেস  / ইসলামি দেশগুলোকে নিয়ে বসছে ইরান

কেউ গোপনে ভালোবাসছে? জেনে নিন তার ৭টি লক্ষণ

রক্তাক্ত গাজা : ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট

ইরানের জ্বালানি খাতে নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

১০

দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে ঢাকা

১১

বন্ধুকে অপহরণ, মুক্তির শর্তে স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব

১২

‘প্রভাব খাটিয়ে’ হাটের ইজারা পেলেন বিএনপি নেতারা

১৩

ফুলে সাজানো রিকশায় প্রধান শিক্ষকের বিদায়

১৪

মুক্তি পেয়েই জেলগেটের সামনে ফের আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

ইসরায়েলের গুপ্তচরকে ফাঁসিতে ঝুলাল ইরান

১৬

পাকিস্তানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আশঙ্কা

১৭

ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার বিমান হামলা

১৮

ঢাকার আবহাওয়া আজ কেমন থাকবে

১৯

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

২০
X