রিকশাচালক ইউনুস মিয়া। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তার সংসার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও চলমান কারফিউয়ের কারণে যেন কষ্টের শেষ নেই তার। সড়কে যাত্রী কম, তার ওপর রান্নাতেও হচ্ছে সমস্যা। তাই প্রতিদিন দুপুরে মেহমান হয়ে আসেন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে।
শুধু ইউনুস একা নয়। ইউনুসের মতো শত শত লোক আসেন এখানে। যেখানে মেহমানদের জন্য রয়েছে ডিম খিচুরি কিংবা মুরগির খিচুরি। এখানে আসা লোকজন স্থানীয়দের কাছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের মেহমান হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, ২০২০ সালে মহামারী করোনা যখন আঘাত হানে মূলত তখনই অসহায়, দুস্থ, দিনমজুর ও রিকশাচালকদের কথা ভেবেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এর পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান এন.এন.কে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে গত চার বছর ধরে প্রতিদিন ২০০ দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে এ খাবার বিতরণ করা হলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পাশে দাঁড়ানোর আহবানে’ এ সংখ্যা আরো ১০০ বাড়িয়ে ৩০০ প্যাকেটে উন্নীত করা হয়েছে।
শুরুর সময় থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন দেওয়ানজি পুকুরপাড় এলাকা সংলগ্ন সড়কে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি কারফিউ ঘোষণার পর নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডেও খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। সপ্তাহের পাঁচ দিন ভ্যানগাড়ি থেকে বিতরণ করা হয় মাছ, মাংস কিংবা ডিম খিচুরি।
স্থানীয়রা জানান, বাকলিয়া এক্সেস রোড এবং দেওয়ানজি পুকুরপাড় এলাকায় এ চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায়। দুপুরে একটি ভ্যানগাড়ি থেকে এ দুই এলাকায় গরিব, দুস্থদের জন্য খাবার বিতরণ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন পদের খাবার থাকে। এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দীর্ঘদিন ধরে এ আয়োজন চলতে থাকায় অনেকেই দুপুরের খাবারটা নিয়মিত সেখানেই খেয়ে থাকেন। পাশাপাশি বাকলিয়া এক্সেস রোডেও এ কর্মসূচি চালু হওয়ায় সেখানকার অসহায় মানুষের উপকার হবে।
ভ্রাম্যমাণ দোকানদার ওসমান গণি বলেন, আগে দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকায় খাবার দেওয়া হতো। দুপুরে রান্নায় সমস্যা হলে মাঝেমধ্যে দুপুরের দিকে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতাম। কিন্তু এখন এক্সেস রোডেই দেওয়া হচ্ছে। এ এলাকাতেও প্রচুর লোকজন রয়েছে যারা দুপুরের খাবার নিয়ে সমস্যায় থাকে। সবার জন্যই ভালো হয়েছে।
আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানান, ড. হাছান মাহমুদের পারিবারিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এনএনকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ আয়োজন করা হয়। করোনাকালে এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাঙ্গুনিয়াতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার খাদ্য, নগদ টাকা এবং ত্রাণ সহায়তা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে জনসেবামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে সংগঠনটি। করোনার সময় হাছান মাহমুদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়িয়ে এ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরেও।
এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ৯ জুলাই থেকে নগরের দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে দুপুরের খাবার বিতরণ শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক হাজার মানুষকে খাওয়ানো হয়। চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বাসভবন। এ বাসভবনের গলির মুখেই সপ্তাহে ৫ দিন দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে কয়েকদিনে আগে দেশে কারফিউ শুরু হলে বাকলিয়া এক্সেস রোডেও এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমরুল করিম রাশেদ কালবেলাকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনাকালে এ কার্যক্রম শুরু করি। বুধ ও শুক্রবার বাদে সপ্তাহে বাকি পাঁচ দিন দুপুরে নিম্নআয়ের অন্তত ২০০ জন মানুষের মধ্যে এ খাবার বিতরণ করা হয়। আমাদের লক্ষ্য থাকে ভালো খাবার তৈরির। প্রতি প্যাকেটে ৫০ টাকার মতো খরচ পড়ে।
তিনি বলেন, নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও এ খাবার খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোনো দিন যেন এ উদ্যোগ বন্ধ করা না হয়। কারফিউ শুরুর পর বাকলিয়া এক্সেস রোডেও কর্মসূচি শুরু হয়েছে।