দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘গুলিতে আমার একমাত্র ছেলের বুক ফুটো হয়ে গেছে’

নাতি সাগরের মরদেহের ছবি দেখিয়ে অঝোরে কাঁদছেন দাদি রাজিয়া খাতুন। ছবি : কালবেলা
নাতি সাগরের মরদেহের ছবি দেখিয়ে অঝোরে কাঁদছেন দাদি রাজিয়া খাতুন। ছবি : কালবেলা

‘বাড়িতে আইলে এ ঘরে আর কেডায় থাকব, আমারে কেডা ফোন করে বলবে দাদি তোমার জন্য কি আনব। তোমার ওষুধ লাগবনি। ওরে সাগর তুই কইরে আমার আগে তুই কেমনে মরলি। তোকে কে গুলি করে মারল’।

ঘরের দরজায় বসে নাতির ছবি হাতে নিয়ে কাঁদছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা রাজিয়া খাতুন। তাকে সান্ত্বনা দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন প্রতিবেশীরাও। ক্ষোভ ও ঘৃণা জানাচ্ছেন সাগরের হত্যাকারীদের প্রতি। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. সাগর মিয়া। পরে সাগরের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত সাগর মিয়া দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার একমাত্র ছেলে। বাবা মা ও দুই বোন নিয়ে মিরপুর-১ নম্বরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন সাগর। কিডনি রোগী বাবার চিকিৎসা ও পেটের দায়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সবজি বিক্রি করে সংসার চালাত সাগরের।

নিহত সাগরের বাবা আবু হানিফ মিয়া বলেন, ঘটনার দিন আমি বারবার বলছিলাম বাবা তুই আজকে যাইস না। আমার ওষুধ ও ঘরে বাজার নাই। হাতেও টাকা ছিল না তাই পেটের দায়ের ভ্যান নিয়ে বের হইছিল। এরপর আমি শুক্রবার বিকেলে ফোনে বলেছিলাম বাসায় চলে আসার জন্য। আমাকে জানায়, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আছে চিন্তা করিও না, আমি বলছি তুই চলে আয়, আমাকে জানায় বাবা আমি আসতে পারব না, এখানে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরপর সন্ধ্যায় ফোন দিলে তার নম্বর বন্ধ পাই। রাত ৮টার দিকে আমি সাগরকে খুঁজতে বের হই। তখনও বাহিরে টিয়ারশেল ও গোলাগুলি চলছিল। পরে রাত ১০টার পর আমি মিরপুর ১০ নম্বরে এসে সাগরের খোঁজ নিলে কেউ একজন বলেন, আপনার ছেলে কি সবজি বিক্রি করত। আমি হ্যাঁ বললে, তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতালের নাম বলে বলল ওখানে গিয়ে খোঁজ নেন, মিরপুরে যারা আহত হইছে এদের প্রায় সবাই ওই হাসপাতালে আছে।

সাগরের বাবা আরও বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করলে তারা রাত ৩টার পর আমার ছেলের লাশ দেখায়। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমার একটি মাত্র ছেলের বুকে গুলি মেরেছে, বুক ফুটো হয়ে গেছে। আমার একটি মাত্র ছেলে তাকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল। আমি অসুস্থ কখন মারা যাই ঠিক নাই, আমার পুরো সংসারটা শেষ হয়ে গেল। তার মা ও দুই বোন রয়েছে তাদের দেখাশোনা কে করবে এখন।

সাগরের ফুফু সাহিদা আক্তার বলেন, সাগর আমার একমাত্র ভাতিজা। বাড়িতে আসলে এ ঘরেই থাকত। সাগরের বাবা অনেকদিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসার জন্য সাগর লেখাপড়া বন্ধ করে ঢাকায় সবজি বিক্রি করত। সংসারের একমাত্র রোজগার করত সাগর। সন্তান হারিয়ে আমার ভাই বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।

নিহতের দাদি রাজিয়া খাতুন বলেন, আমার নাতি বাড়িতে এসে দুয়েকদিন থাকতো। ঢাকা যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে কত মজা করত। এলাকায় সকল ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। আমার নাতিকে ফিরিয়ে দাও। কে আমার নাতিকে মারল, তার তো শত্রু নাই।

দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত দেবিদ্বারে তিনটি মরদেহ আসার খবর পেয়েছি। ঢাকায় নিহত সাগরের বাড়ি বড়শালঘর গ্রামে। নিহত পরিবারগুলোর খোঁজ খবর রাখছি।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা কালবেলাকে বলেন, ঢাকায় নিহত তিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমি নিজে তাদের বাড়িতে গিয়ে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিয়েছি। সাগরের পরিবারকেও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের

দিল্লিতে আত্মঘাতী হামলা, গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো অভিযুক্তের বাড়ি

সন্তানের গায়ের রঙ ‘ভিন্ন’ হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক

শীতের সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

১৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

বিপিএল: চমক দেখাল ঢাকা ক্যাপিটালস

মোটরসাইকেলে এসে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে আগুন

রচনার বিদায়, এবার দিদিদের সামলাবেন মীর

পদ ফিরে পেলেন বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতা

কালবেলার হাতে কলরেকর্ড, সেই খণ্ডিত মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে এলো নতুন তথ্য 

১০

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ / ডাস্টার দিয়ে ছাত্রীর মাথা ফাটানো সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত 

১১

ফেসবুক মনিটাইজেশন হারানো এড়ানোর সহজ কিছু টিপস

১২

১০৩ রানে পিছিয়ে আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশের দরকার ৩ উইকেট

১৩

দিল্লি সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

১৪

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়াল এনসিপি

১৫

পিপলস চয়েসে শীর্ষে মিথিলা

১৬

বিশ্বকাপের টিকিট পেতে যে সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে পর্তুগাল

১৭

চা বিক্রির সময় ছাত্রলীগ নেতা ইমরান গ্রেপ্তার

১৮

৩ দেশের ৪ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

১৯

নগদে প্লে প্রোটেক্ট সতর্কবার্তা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই

২০
X