কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের বাড়ি বরিশাল জেলায়। তাদের অধিকাংশই গুলিতে নিহত হয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। ঢাকায় দিনমজুর, পোশাক কর্মী, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মী, মোটর ওয়ার্কশপের কর্মী, ট্রাকচালক, ভ্যানচালক ও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন তারা। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও বিএনপি কর্মীও রয়েছেন। নিহতদের পরিবারে একদিকে চলছে শোকের মাতম, অন্যদিকে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা। অনেকের পরিবারের আয় উপায়ের একমাত্র মাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলার বাবুগঞ্জের দুজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রহমতপুর ইউনিয়নের মহিষাদী গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে, চট্টগ্রাম ওমরগনি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
১৯ জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাবুগঞ্জের বাহেরচর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মিজানুর রহমান বাচ্চুর ছেলে আব্দুল্লাহ আল আবির। তিনি ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্টাফ ছিলেন।
বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার দুজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কালনা গ্রামের নজরুল ইসলাম খলিফার ছেলে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইমরান খলিফা ১৯ জুলাই ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার সময়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন বলে জানিয়েছেন তার পিতা নজরুল ইসলাম।
একই উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মহসিন সিকদারের ছেলে জামাল সিকদারের ২০ জুলাই সৌদি আরবের ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করার কথা ছিল। ১৯ জুলাই বাড়ি থেকে গিয়ে পর দিন এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময়ে যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের পানবাড়িয়া গ্রামের জাকির খানের ছেলে শাওন খান ঢাকার রামপুরার একটি ভাতের হোটেলে কাজ করতেন। ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর হোটেলে যাওয়ার সময় রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মো. হাসানের ছেলে শাহিন ও হিজলা গৌরবদি ইউনিয়নের চর দেবুয়া গ্রামের নাঈম সরদারের ছেলে নোমান ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তারা দুজনেই ঢাকায় পড়াশোনা করতেন।
বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মান্নানের মেজো ছেলে জসীম উদ্দিন ঢাকার উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে একটি অটোমোবাইলসের দোকানে চাকরি করতেন। ১৯ জুলাই দোকানের কাজে বের হলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ওই ইউনিয়নের বেতাল গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন রনি মহাখালীর একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। ওয়ার্কশপের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার সাটিবুনিয়া গ্রামের রবিউল হাসান রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় একটি ইলেকট্রিক দোকানের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। ২০ জুলাই শনির আখড়া দিয়ে দোকানে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
বাকেরগঞ্জের একজন ওয়ার্ড মেম্বার জানান, নিহত রবিউলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তার পরিবারটি খুবই অসহায়।
বরিশাল পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নিহতদের মধ্যে ৯ জনের দাফন বরিশালে যার যার বাড়িতে হয়েছে। একজনের দাফন ঢাকায় হয়েছে বলে শুনেছি। তার সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য নেই।
মন্তব্য করুন