শরীয়তপুরের ডামুড্যায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে উঠেছে। পরে এ ঘটনায় ওই ক্লিনিকটিতে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট করে বলে অভিযোগ করে ক্লিনিক ও ফার্মেসি কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার হ্যাপি ক্লিনিক নামের ওই বেসরকারি হাসপাতালে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
রোগীর স্বজনরা জানান, গত বুধবার মধ্যরাতে পূর্ব ডামুড্যা এলাকার আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আকলিমা বেগমের প্রসব বেদনা ওঠে। পরে তাকে ডামুড্যা বাজার এলাকার হ্যাপি ক্লিনিকে নিয়ে যান স্বজনরা। এ সময় হাসপাতালটিতে চিকিৎসক না থাকলে সিনিয়র নার্স সোহানা এ রোগীকে ভর্তি করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার ভোরবেলা একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন আকলিমা। জন্মের কিছুক্ষণ পর নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানান, অন্যদিকে প্রসূতি মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে দুপুরে নবজাতক শিশু ও রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মা। এদিকে এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ তুলে রাতে হাসপাতালটিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় রোগীর স্বজনরা।
আকলিমার ভাই কাউছার অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে এলে তখন কোনো চিকিৎসক ছিল না। তারা চিকিৎসক ছাড়াই রোগী ভর্তি নিয়েছে। আমরা বারবার চিকিৎসকের কথা জিজ্ঞেস করলে ক্লিনিকের পরিচালক আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক এসে আমার বোনের অবস্থা দেখে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। পরে আমার ভাগিনা আর বোন দুজনেই মারা যায়। এসব কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
হ্যাপি ফার্মেসির মালিক মো. হায়দার হোসেন কালবেলাকে বলেন, কোনো ভুল হলে তা ক্লিনিকের হতে পারে। তারা কেন আমার ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুট করল। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে বিল পরিশোধ করার জন্য আমার ক্যাশে প্রায় ৬ লাখ টাকা ছিল। ওরা আমার ক্যাশ ভাঙচুর করে সে টাকা নিয়ে যায়। এ ছাড়াও আমার ওষুধ রাখার তাকগুলো ভাঙচুর করে ওষুধ লুট করে। এতে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বেসরকারি এ হাসপাতালটির পরিচালক আব্দুর সত্তার বলেন, রোগীর ভর্তির ব্যাপারে সিনিয়র নার্স আমাদের কিছু জানায়নি। সকালে বাচ্চা প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে আমাদের বিষয়টি জানায়। পরে চিকিৎসক রোগীকে দ্রুত ঢাকা পাঠায়।
এ বিষয়ে ডামুড্যা থানার ওসি এমারত হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে দেখি ক্লিনিকের নিচের তলা ভাঙচুর করেছে রোগীর স্বজনরা। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া ক্লিনিকের নিরাপত্তার জন্য সারা রাত পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছিল।
উপজেল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা খোকন কালবেলাকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে গাফিলতির সত্যতা পেলে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন