ফেনীতে বন্যায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তাগুলোতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। মারাত্মক দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। পাঁচশ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি। জেলায় এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যার কবলে পড়ে ভাঙাচোরা সড়কগুলোতে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষজন। আবার কয়েকটি স্থানে এখনো সড়ক নিমজ্জিত রয়েছে বন্যার পানিতে।
ফেনীতে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠেছে রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ফুলগাজীর জগৎপুর গ্রামের একটি সড়কের দেড় কিলোমিটার রাস্তায় ভেঙেছে ১৩ স্থানে। প্রতিটি ভাঙায় পরিমাণ লম্বায় ১৫ ফিট গভীরতা ১০ ফিটের বেশি। ফলে বির্পযস্ত জনজীবন।
পানির স্রোতে ভেঙে গেছে সড়কের বেশকিছু অংশ। সরে গেছে পাকা সড়কের কনক্রিট ও সলিং। সড়ক ভাঙা থাকায় আক্রান্ত পরিবারগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে বেগ পেতে হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীসহ সরকারি বেসরকারি সংস্থাকে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অসুস্থ রোগী ও স্বজনদের। যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখতে ভাঙা সড়ক দ্রুত মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাম সারওয়ার ভুঞা জানান, অতি সত্তর নদী বাঁধের দুপাশে ভাঙন না মেরামত করা হলে আবারও বন্যার কবলে পড়বে এ এলাকার মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব যেন কাজটি দ্রুত সমাধান করে।
দরবারপুর ইউনিয়নের জগৎপুরে গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নজরুল ইসলাম ভুঞা বলেন, বন্যায় নিজের এলকার বাড়িঘর ডুবে একাকার দেখে বার বার হতাশায় ভুগছিলাম। শেষমেশ গ্রামে এসে দেখি কিছু নাই, সব নিয়ে গেল বন্যায়। এমন বন্যা থেকে রেহাই পেতে দরকার একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
ফেনী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক জানান, জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে পানিতে ডুবেছিল ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। পানির স্রোতে ৩৪২টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০০ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। স্বল্প মেয়াদী সড়ক ২ মাসের মধ্যে, আর দীর্ঘমেয়াদী সড়কগুলো পৌনে ২ বছরের মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাই বরাদ্দের জন্য অর্থের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, আমাদের আওতাধীন কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
এদিকে দুদফা বন্যায় মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর দুপাশে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ৮৯টি স্থানে ভাঙন মেরামত করা না গেলে আবারও বন্যার কবলে পড়বে ফেনীর এ জনপদ। দ্রুত সময়ে সবকিছু স্বাভাবিক হবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
মন্তব্য করুন