খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণঅবাঞ্ছিত কার্যক্রম সঠিক হয়নি। এতে হাসপাতালের শত শত মানুষের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। যেসব চিকিৎসক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিরীহ সাধারণ চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সাজিদ হাসান বাপ্পী।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় খুলনা মহানগর বিএনপি নেতারা বলেন, যে বা যারা চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তাদের সঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে ঢালাওভাবে পদত্যাগ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা বিএনপি সমর্থন করে না।
এদিন দুপুর ১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং খুলনা মহানগর ও ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতারা সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হওয়া উপপরিচালকের রুমে যান এবং তাকে মোবাইলে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এর আগে সকাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যত অচল হয়ে যায়। বহির্বিভাগে বেশিরভাগ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় তাদের দূর-দূরান্ত থেকে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান। আর ৫১ চিকিৎসককেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে ২০ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া আন্তঃবিভাগে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, কনসালট্যান্টসহ আরও ২১ চিকিৎসকের দেখা নেই। এতে পুরো হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থার বেহালদশা তৈরি হয়েছে। রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হওয়া হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আকতারুজ্জামান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি গতকাল কনফারেন্সরুমে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে কয়েকশ মেডিকেল শিক্ষার্থী এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় বিভিন্ন গালি ও হুমকি দিয়ে জোর করে দুটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরমধ্যে একটি আমার পদত্যাগ অন্যটি ৫১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার। আসলে সরকারি চাকরি করি, কখনো কোনো দল করিনি। এখন এভাবে লাঞ্ছিত হতে হলে কীভাবে চাকরি করব।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুর্শিদ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতাল সরাসরি আমাদের অধীনে না। তারপরও আমি বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এরইমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের চাপে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে হাসপাতালের মোট ৫১ জন চিকিৎসককে সব ধরনের সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের হাসপাতালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এই ৫১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পদের চিকিৎসক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন