কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বন্যায় বিপর্যস্ত কুমিল্লা, ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ

বন্যায় ধসে গেছে বাড়ি। ছবি : কালবেলা
বন্যায় ধসে গেছে বাড়ি। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় কারো ঘর থাকলেও তাতে বসবাসের কোনো পরিবেশ নেই। বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং আয় রোজগারের পথ হারিয়ে দিশাহারা।

জানা গেছে, কুমিল্লায় বন্যায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৬৭৪টি ঘর। এসব ঘর মেরামত করেও থাকা যাবে না। নতুন করে ভিটা তৈরি করে ঘর বানানো ছাড়া এসব বিধ্বস্ত ঘরে থাকার কোনো উপায় নেই।

এ ছাড়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের বাসিন্দারাও নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় বন্যায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের আবাসিক খাতে।

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বুড়িচং উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার। এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ১৪৩টি। মাটির এবং টিনের কাচা ঘরবাড়ি ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনে পানির স্রোত যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে সে এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

এ ছাড়া মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭২০টি ঘর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৩শ। চৌদ্দগ্রামে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৫শ, এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪৫টি, নাঙ্গলকোটে ১১ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ৫শটি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত আদর্শ সদরে ১৩ হাজার ৫শ, লাকসামে ১৪ হাজার ৫০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সদর দক্ষিণে ২ হাজার ৪৮২টি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ১৩২টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৮১০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ইন্দ্রবতী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ১৫টি মাটির ঘর ধ্বসে গেছে বন্যার পানিতে। ঘরহারা হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন এসব পরিবারগুলো।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র মতে, চলমান বন্যায় কুমিল্লায় মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৫০ টন ফিনফিশ, ১০ দশমিক ২৮ টন চিংড়ি, ১০ কোটি ১৭ লাখ সংখ্যক পোনামাছের ক্ষতি হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য হিসাবে ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, চিংড়িতে ৫ কোটি টাকা, ১৭ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার পোনা জাতীয় মাছের ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপা আউশ ও আখের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় আবাদ করা জমির পরিমাণ এক লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ হেক্টর। যার মধ্যে ৬৩ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্যে এই খাতে মোট ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, কুমিল্লায় বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বানের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে বলা যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এবারের বন্যায় কুমিল্লায় কৃষকরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রণোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ, ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ায় সহায়তা, বিনামূল্যে কৃষি সেবা ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, জেলায় চার হাজারেরও বেশি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯ হাজার বিভিন্ন জাতের গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষত। এবারের বন্যায় প্লাবিত কৃষিখাত, মাছের ঘের, প্রাণিসম্পদ, রাস্তাঘাট ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মিলিয়ে কুমিল্লাজুড়ে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী জানান, ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নিরূপণ ফরম ‘ডি’ মোতাবেক আমরা কুমিল্লার বন্যাকবলিত ১৪ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত সব খাতগুলি বিবেচনা করে সরকারি ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবাইকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেবেন। যা দ্রুত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে মনে করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা ২০২৪
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১০

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১১

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

১২

ক্ষমা চাইলেন স্বাধীন খসরু 

১৩

স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আমিনুল হক

১৪

ঢাকায় উদযাপিত হলো রাশিয়ান পতাকা দিবস

১৫

একাদশে ভর্তিতে কোনো শিক্ষার্থী পায়নি ৩৭৮ কলেজ

১৬

৫০ হাজারে শ্লীলতাহানির রফাদফা করলেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক

১৭

কে বেশি টাকা দেয়, ফেসবুক নাকি ইউটিউব

১৮

অর্ধ বিলিয়ন জরিমানা থেকে রেহাই পেলেন ট্রাম্প

১৯

মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে থানায় জিডি মহানগর বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিনের

২০
X