নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পুলিশের উপস্থিতিতে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি আহত হন অন্তত ১০ জন। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সোনামণির ডাঙ্গায় দুপুর সাড়ে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৬৫৪০ নম্বর কবলা দলিলমূলে বিএস ৫৮৪৮ দাগের ২৮ শতক জমির মালিকানা দাবিদার আইনজীবী মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে রশিদুল ইসলামসহ ৫ জনকে বিবাদী করে ১৪৪/৪৫ ধারা অনুযায়ী নীলফামারী কোর্টে মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই জমিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার অবনতি না ঘটার নোটিশ জারি করেন আদালত। কিন্তু উভয়পক্ষ আদেশ অমান্য করে জোর করে জমি নিজেদের দখলে নেওয়ার দলবদ্ধ চেষ্টা করে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ বাদী-বিবাদীকে জমির কাগজপত্র নিয়ে ডিমলা থানায় হাজির হতে বলে। উভয়পক্ষই এ প্রস্তাব মেনে নেয়। পুলিশ ও বাদী-বিবাদীর আলোচনা চলাকালে হঠাৎ মামুনুর রশীদ ও বাবুলের বাড়ির প্রবেশপথে উভয়পক্ষের অন্তত ১০০ জন নারী-পুরুষ লাঠি দিয়ে মারধরে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ওই জমিতে বসবাসকারী বাবুলের রান্নাঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আরও পড়ুন : যুবলীগ-ছাত্রলীগ বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে : ভিপি নুর
এ ঘটনায় মামলার বাদী মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী জানান, আমাদের জমিতে জোর করে বিবাদী দখলের চেষ্টা করে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। উভয় পক্ষের লোকজনকে কাগজ নিয়ে থানা যেতে বলে পুলিশ। আমরা তা মেনে নেই। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশের সামনে বিবাদীর সঙ্গে কথা বলে নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ (মনি) তার পরামর্শে হঠাৎ করে বিবাদী আমার বাবাসহ আমার পরিবারের সদস্যদের লাঠি দিয়ে মারধর করে আহত করে। বিবাদীর লাঠির আঘাতে আমার বাবার হাত ভেঙে গেছে, আমার ছোট ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা ৬ জন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন।
বিবাদী রশিদুল জানান, আমার জমিতে জোরপূর্বক মামুন ঘর উঠাতে চায়। আমি বাধা প্রদান করে বলি, জমি নিয়ে কোর্টে মামলা চলমান। এ সময় আমাদের মাঝে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে আমাদের জানায়, এটা মামুনুর রশিদের জায়গা। এখানে সে ঘর উঠাবে তার পক্ষে রায় আছে। পুনরায় আমাদের মাঝে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ থানায় কাগজ নিয়ে যেতে বলে এবং আমরা তা মেনে নিই।
তিনি জানান, এর কিছুক্ষণ পরেই বাবুলের বাড়ির কাছে তার পরিবার ও মামুনুর রশীদের মারামারি হয়। ঘটনাস্থলেই বাবুলের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এমনকি তা পুলিশের সামনে ঘটলেও এ মুহূর্তে পুলিশ নীরব ছিল।
এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদের করা অভিযোগ অস্বীকার করে নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ (মনি) বলেন, তারা নিজেরা সবাই প্রতিবেশী। ডিমলা থেকে ওসি আমাকে কল দিয়ে বলেন, আপনার ইউনিয়নের পাশেই পুলিশ পাঠিয়েছি। একটু মীমাংসা করার ব্যবস্থা করবেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশ আছে এবং খুব উচ্চবাচ্য হচ্ছে। আমি আর সেদিক না গিয়ে ওসি সাহেবকে বললাম, আপনি নিজেই আসেন। এখানে উভয়পক্ষ উত্তেজিত। আমাদের কথায় কতটুকু কাজ হবে তা আমার জানা নেই। আমি এর থেকে আর বেশি কিছু জানি না। এ বিষয়ে বাবুল হোসেন জানান, খাসজমিতে বিগত ৩০ বছর ধরে পরিবারসহ বসবাস করছি। মামুন আমাকে নোটিশ দিয়েছে বাড়ি ভাঙার জন্য। রশিদুলের জায়গা দখল করতে গিয়ে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের বেধড়ক মারধর করে। আমি ও আমার সহধর্মিণী অসুস্থ। আমাদের আরও কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ পাটোয়ারীর করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আব্দুর রশিদকে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘মন্তব্যের কিছু নেই, যা পারেন লিখবেন। আপনি আমাকে বলেন যে, এই বিষয়ে আমি কি বক্তব্য দেব।’
এ প্রসঙ্গে ডিমলা থানার ওসি লাইছুর রহমান জানান, এ ঘটনায় তরিকুল ও আবু তাহের নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন