খান মাহমুদ আল রাফি, মেহেরপুর
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রেমের চিঠি নয় ডাকে আসে তালাক ও লিগ্যাল নোটিশ

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা
মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা

‘একসময় পত্র মিতালি ও ভালোবাসার চিঠি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হতো। আর বর্তমানে যেসব চিঠি আদান-প্রদান হয় তার মধ্যে অন্যতম লিগ্যাল নোটিশ, তালাক নোটিশ, তালাকের খরপোশের মানি অর্ডার এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের চিঠিপত্র। এ ছাড়াও আসে বিদেশি পার্সেল, সেগুলো অফিস থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়। রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা আগের মতোই সেবা প্রদান করে যাচ্ছি; কিন্তু মানুষ ভাবে আমাদের আসলে তেমন কোনো কাজ নেই।’

চিঠি বাছাই করতে করতে এসব কথা বলছিলেন মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টম্যান মো. খেদের আলী।

৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস। প্রতি বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডাক অধিদপ্তর দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটি পালন নিয়ে ডাক বিভাগের কর্মীদের মধ্যে তেমন একটা উন্মাদনা পরিলক্ষিত হয়নি।

সম্প্রতি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেহেরপুর প্রধান ডাকঘর ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশাল ভবনটি উদ্বোধন করা হলেও জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ২৬ জন জনবলের বিপরীতে বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন।

গ্রাম্য ডাককর্মীরা প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। জানা গেছে, বর্তমানে গ্রাম্য পোস্টমাস্টারের ৪ হাজার ৪৬৫ টাকা, পিয়ন ৪ হাজার ৩৬৫ টাকা ও রানার ৪ হাজার ১৭৭ টাকা সম্মানী বাবদ প্রতিমাসে পেয়ে থাকেন।

মেহেরপুর জেলা ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডাক দিবস ২০২৪ উপলক্ষে অনলাইন বুকিং সেবার উদ্বোধন করা হবে। এর মাধ্যমে যে কোনো গ্রাহক কোনো চিঠি বা পার্সেল ঘরে বসেই বুকিং করতে ও ডাক মাশুল পরিশোধ করতে পারবেন। শিগগিরই পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট ডাকযোগ গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও ভূমিসেবা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, চিঠি বুকিং ও বিলিতে এসএমএস সার্ভিস নতুন তিনটি সেবা চালু হওয়াতে ডাক বিভাগ মানুষের কাছে নতুন করে আস্থার জায়গা ফিরে পাচ্ছে।

সরেজমিন মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরে যেয়ে জানা যায়, মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের অধীনে একটি উপজেলা পোস্ট অফিস (গাংনী) ও তিনটি সাব পোস্ট অফিস রয়েছে। সেগুলো হলো, আমঝুপি সাব পোস্ট অফিস, বড়বাজার সাব পোস্ট অফিস ও কোর্ট সাব পোস্ট অফিস। এ ছাড়া ৩০টি শাখা ডাকঘর রয়েছে। এ সময় দেখা যায় সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তি হন্য হয়ে টেবিলে টেবিলে কাগজ খুঁজছেন।

তিনি জানান, এক মাস আগে রেজিস্ট্রি ডাক যোগে তিনি একটি ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিলেন। এখন প্রাপক চিঠিটি পাননি বলছেন। এজন্য আমি এসেছি প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের খোঁজ নিতে।

মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সরকার ডাক বিভাগকে উন্নত করার জন্য ও সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক ইনভেস্ট করছে; কিন্তু এর পরও সেবার মান সেই আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে। মেহেরপুরের প্রধান ডাকঘর থেকে আমি একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম মেহেরপুর শহরেই এক ব্যক্তির কাছে। আজকে ১৫ দিন হয়ে গেল, এর পরও সেই নোটিশটি প্রাপকের হাতে পৌঁছায়নি। এন আই এক্টের মামলা করার ক্ষেত্রে নোটিশ ইস্যুর দিন থেকে মাত্র ৩০ দিন সময় পাওয়া যায়। এ ছাড়া আমার কাছে অন্য ব্যক্তির দুটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিয়ে গেছে এক মাস আগে। সেগুলো এখনো ফেরত নিয়ে যায়নি।’

মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার শামীম আহমেদ বলেন, ‘মেহেরপুর প্রধান ডাকঘর থেকে অতীতে সব মিলিয়ে দিনে প্রায় এক হাজার চিঠির আদান প্রদান হতো। তবে বর্তমানে সাধারণ চিঠির সংখ্যা কমে গেলেও রেজিস্ট্রি যোগে পাঠানো চিঠির সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ আইনি ও ব্যক্তিগত রেজিস্ট্রি চিঠির সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তবে সাধারণ চিঠি প্রদানের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি স্কিম ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ এবং মেয়াদি হিসাব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ১০ হাজার সেবা গ্রহীতা রয়েছেন। তারা কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সদ্য চালু হয়েছে সবচেয়ে কম খরচে টাকা পাঠানোর জন্য ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম (ইএমটিএস)। তবে একসময়ের জনপ্রিয় পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সেবা জনসচেতনতার অভাবে প্রায় বন্ধ।’

মেহেরপুর জেলা জজকোর্টের আইনজীবী সেলিম গাজী কালবেলাকে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর সেবার মানের কাছে পিছিয়ে পড়ছে ডাক বিভাগ। যেখানে কুরিয়ার সার্ভিসে আমরা কোনো চিঠির বুকিং দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়, সেখানে ডাকবিভাগের মাধ্যমে চিঠি পাঠালে এখনো ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে প্রাপক পর্যন্ত পৌঁছাতে। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পায় না। বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান হলো ডাক বিভাগ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে ডাক বিভাগকে ঢেলে সাজানোর জন্য।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটগ্রহণের আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ

৩৪৫ প্রতিষ্ঠানে সবাই পাস

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার গুঞ্জনে মুখ খুললেন সোনাক্ষী

এইচএসসি: কোন বোর্ডের ফল পেতে কীভাবে এসএমএস পাঠাবেন

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১, জিপিএ-৫ কত?

এইচএসসি পরীক্ষায় কোন বোর্ড এগিয়ে, পিছিয়ে যে বোর্ড

২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই অকৃতকার্য 

‘জীবনের প্রথম ভোট, খুবই ভালো লাগছে’

এইচএসসিতে জিপিএ ৫-এর সংখ্যা কমলো অর্ধেকেরও বেশি

তিন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নাম লেখালেন সাকিব

১০

এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, কোন বোর্ডে পাসের হার কত

১১

ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা গেছেন কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী

১২

‘যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে তা কষ্ট দেয়’

১৩

সাবেক এমপি শিবলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

১৪

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ

১৫

চুলা তৈরির সময় মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল ৭১ রাউন্ড গুলি

১৬

বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা

১৭

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, বয়স ৪৫ হলেও আবেদন

১৮

রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

১৯

অবশেষে সুলাইমানিয়ার আকাশপথ খুলে দিল তুরস্ক 

২০
X