দীর্ঘ দেড় যুগ পর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ফখরুল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন ও এক আসামিকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কবির হোসেন।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্তকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন পাঁচজন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বালাগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে মাহমদ আলী উরফে কাছা, মৃত তৌফিক মিয়ার ছেলে ছাবের আহমদ তার ভাই জুবের আহমদ, মৃত রফিক মিয়ার ছেলে আফিক মিয়া, আখলিছের ছেলে সুহেল ও মৃত লালা মিয়ার ছেলে শামীম চৌধুরী। এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন একই গ্রামের মৃত গণির ছেলে ইন্তাজ।
মামলা থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, বালাগঞ্জের জামালপুর গ্রামের মনির আলীর ছেলে শাহিদ আলী, মৃত রফিক মিয়ার ছেলে মাফিক, একই গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে কাইয়ুম, সালেহ আহমদের স্ত্রী আমারজান বিবি ও মৃত রইছ আলীর ছেলে তজম্মুল আলী।
মামলা চলাকালে একই এলাকার মৃত জোয়াদ উল্লার ছেলে আখলিছ (৪৫) ও সিরাজ আলীর ছেলে মনির আলী (৩৫) মারা যান। রায় ঘোষণাকালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাহমদ আলী উরফে কাছা আদালতের কাঠগড়ায় হাজির থাকলেও অপর ছয় আসামি পলাতক ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১২ মে দুপুরে জামালপুর গ্রামের ইউছুফ আলীর ছেলে ফখরুল ইসলাম (৩৫) জুমার নামাজ আদায়ের জন্য বাড়ি থেকে বের হলে পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে ফখরুলের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ সময় ফখরুল ইসলাম আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে খাইশাপাড়া মাদ্রাসার সামনে পৌঁছালে তাকে ঘেরাও করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আসামিরা কোপাতে থাকেন।
একপর্যায়ে ফখরুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। তার চিৎকার শুনে ফখরুলের ভাই আব্দুর নুর ও বোন দিলারা বেগম এগিয়ে গেলে আসামিরা তাদেরও মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফখরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই সিরাজুল ইসলাম সিরাতুল বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করে বালাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ২৮ জুলাই ১৪ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ২০০৮ সালে ১ জুলাই থেকে আদালত এ মামলার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি ও ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রোববার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম ইয়াহ-ইয়া চৌধুরী সুহেল।
মন্তব্য করুন