দুই দেবরের বিরুদ্ধে আদালতে যৌন হয়রানি ও গাছকাটার মামলা করে বিপাকে পড়েছেন কামরুন নাহার নামে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী। নারীর অভিযোগ, মামলা তুলে না নিলে তার ঘরে আগুন দিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন তারা। তাদের ভয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি ও তার বড় ছেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার পূর্বকেরোয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
৫ আগস্ট আদালতে দায়ের করা মামলাটি শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে রায়পুর থানা পুলিশ গ্রহণ করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পূর্ব কেরোয়া গ্রামের আলাউদ্দিন বেপারি বাড়িতে কামরুন নাহারের পুত্রবধূকে প্রায় সময় উত্যক্ত করত। গত শনিবার রাতে ঘরে ঢুকে নাহারের পুত্রবধূকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায় একই বাড়ির সোহেল (৩৫)। এসময় চিৎকার দিলে সোহেল পালিয়ে যায়। এ ঘটনা স্থানীয়দের জানালে পর দিন সোহেল ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেন (৪৫) কয়েকটি ফলগাছ কেটে ফেলে। এতে বাধা দেওয়ায় পরে সোহেল, দেলোয়ারসহ কয়েকজন মিলে অসহায় নারী কামরুন নাহার, তার পুত্রবধূ ও ছেলে ইব্রাহিম হোসেন নাঈমকে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।
এসময় স্বজনরা আহত গৃহবধূ কামরুন নাহার ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় গ্রামে বিচার ও অভিযুক্তদের স্বজনদের বাধায় পরে নিরুপায় হয়ে কামরুন নাহার বেগম বাদী হয়ে সোহেল ও দেলোয়ারকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল মসাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। আদালত রায়পুর থানার ওসিকে ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পরপরই গৃহবধূ কামরুন নাহার বেগম মামলা তুলে না নিলে ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও তার বড় ছেলে নিশাদকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এমন অভিযোগ কামরুন নাহার বেগমের। দেবরদের ভয়ে তিনি ও তার বড় ছেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা বাড়ি যেতে পারে না।
কামরুন নাহারের বড় ছেলে নিশাদ বলেন, আমি ইলেকট্রিক কাজ করি। মামলা তুলে না নিলে সোহেল, দেলোয়ার ও তার লোকজন ঘরে আগুন দিবে ও আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা তাদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
কামরুন নাহার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আদালতে মামলা করে বিপদে পড়েছি। মামলা তুলে না নিলে ঘরে আগুন দেবে ও আমার বড় ছেলেকে এলাকায় ঢুকতে দেবে না। দুইজনের ভয়ে গত এক সপ্তাহ বাড়ি যেতে পারি না। বাপের বাড়ি ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় পালিয়ে থাকি। আমরা অসহায় মানুষ, এত যন্ত্রণা সহ্য হয় না।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার আসামি সোহেল ও দেলোয়ারের বাড়িতে গেলে তাদের বসতঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তবে তারা হুমকির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের শুধু শুধু হয়রানি করা হচ্ছে।’
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, আদালতের নির্দেশ মতে শুক্রবার সকালে কামরুন নাহারের মামলা গ্রহণ করা হয়। তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য একজন এসআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন