যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আজহারীর মাহফিল : থানায় জিডির হিড়িক

থানায় জিডি করেছেন ভুক্তভোগী দুজন (ডানে স্টেজে মিজানুর রহমান আজহারী) ছবি: কালবেলা
থানায় জিডি করেছেন ভুক্তভোগী দুজন (ডানে স্টেজে মিজানুর রহমান আজহারী) ছবি: কালবেলা

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলির পুলেরহাটে আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা ৩টা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ফোন ও স্বর্ণলংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন, এতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

যশোরের শহরতলির পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন রাতে বক্তব্য দেন আলোচিত ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে মুসল্লিদের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়।

শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হতে শুরু করেন। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কে নারী, শিশু ও পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ জন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। মাহফিল প্রাঙ্গণে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য দেন।

রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার গুজব। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর।

তবে হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসেন। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছেন, তারা জিডি করতে পেরেছেন। আর শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। কয়েক হাজার জিডির সংখ্যা হতে পারে বলে ধারণা করছি।’

মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে এসেছিলেন সদরের রূপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। একপর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’

বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলির নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক ও অপরাধমূলক কাজ। লাখ লাখ মানুষের সমগম হয়েছে মাহফিলে। চোরেরাও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল। আর আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, ব্যাপক সমগম স্থানে নামি-দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।’

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম ইমান-আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিল। হাজার হাজার মানুষের মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছে। তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরি করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী মাহফিল হয়েছে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। এর ভেতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ ফলে মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার (১ জানুয়ারি) আলোচনা করেন মাওলানা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা।

শেষ দিন গতকাল শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় হালকা কুয়াশা, কিছুটা বেড়েছে শীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদেশি এয়ারগানসহ ৪০৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

২৪ নভেম্বর : আজকের রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

কাকে শাস্তি দিতে চান হুমা কুরেশী?

ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

যুবদল নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

জবি শিক্ষার্থীদের বাস সেবা দিতে চায় শিবির, অনুমতি দেয়নি কমিশন

ইউক্রেন শান্তি চুক্তি আলোচনায় বড় অগ্রগতি

এসএসসি পাসে মীনা বাজারে চাকরির সুযোগ

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা

১০

পুরুষদের প্রস্টেট চেক করানো কেন জরুরি

১১

১০৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৫২ জনের গণশুনানি

১২

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, দ্বিতীয় ঢাকা

১৩

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়া ছাড়া উপায় নেই : ইরান

১৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, টেঁটাবিদ্ধে বৃদ্ধ নিহত

১৫

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৬

হুমকির মুখে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জাতীয় গ্রিড লাইন

১৭

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার পদত্যাগ

১৮

আজ ঢাকার আবহাওয়া যেমন থাকতে পারে

১৯

আড়ং ডেইরিতে নিয়োগ, দ্রুত আবেদন করুন

২০
X