আব্দুল লতিফ লায়ন, বকশীগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কম দামে মধু বিক্রি করছেন মৌয়ালরা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে মৌ মাছির দেখভাল করছেন খামারি। ছবি : কালবেলা
জামালপুরের বকশীগঞ্জে মৌ মাছির দেখভাল করছেন খামারি। ছবি : কালবেলা

বকশীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। সরিষার হলুদ ফুল ও গন্ধে চারদিক মাতোয়ারা। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। সরিষার ফলন ভালো হওয়াতে মধু সংগ্রহ বেশির সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে কম দামেই মধু বিক্রি করছেন মৌয়ালরা।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বকশীগঞ্জে এসেছেন মৌ চাষিরা। সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধ করে বসিয়েছেন মৌ মাছির বাক্স। মাছি উড়ে গিয়ে ফুলের মধু সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসছে আপন ঠিকানায়। দেখভাল করার জন্য পাশেই তাঁবু গেড়েছেন মৌ চাষিরা। উপজেলার মেরুরচর, নিলাক্ষিয়া, লাউচাপড়া, শেখেরচর, সাজিমারা, সাধুরপাড়া, পলাশতলা, মাইছেনির চর, সারমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক স্থানে মধু সংগ্রহের জন্য মাছিসহ বাক্স বসিয়েছেন মৌয়ালরা।

মৌয়ালরা জানান, নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত চলে মধু সংগ্রহ। জামালপুর, শেরপুর, খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, শরীয়তপুর পঞ্চগড়, মধুপুর, সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে তারা মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের পর ধনিয়া, কালোজিরা, তিল ও মিষ্টিকুমড়া ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এভাবে ঘুরে ফিরে বছরের অন্তত ৭ মাস মধু সংগ্রহ করেন তারা।

উপজেলার মেরুরচরের আউলপাড়ায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মহিউদ্দিন নামে এক খামারি। তিনি এসেছেন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বতুল বাজার থেকে।

তিনি বলেন, ৩০০টি মৌমাছির বাক্স নিয়ে এসেছেন তিনি। মৌমাছি প্রায় দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গিয়ে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রতি সপ্তাহে এক টন মধু সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানান তিনি। প্রতি কেজি মধু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানান এ খামারি।

মুকুল মিয়া নামে এক মৌয়াল জানান, ৩২০টি বাক্সে মাছি নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য খুলনা থেকে এসেছেন তিনি। প্রতি বছরই আসেন মধু সংগ্রহের জন্য। এ বছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় মধু সংগ্রহ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে মধুর বাজার নেই। তাই বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হবে। বিক্রি বাড়লে লাভের মুখ দেখা যাবে বলে জানান তিনি।

লাউচাপড়া গারো পাহাড়ে মধু সংগ্রহ করতে আসা বাগেরহাট এলাকার হোসেন আলী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ফিরে ৬-৭ মাস মধু সংগ্রহ করা যায়। পাঁচ-ছয়জন লোক খামারে কাজ করে। এ ছাড়া বছরের ৫ মাস মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। খামারে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০০ কেজি চিনির প্রয়োজন। চড়া দামে চিনি কিনে মৌমাছি পালন সম্ভব নয়। এ ছাড়া উৎপাদিত মধু বিক্রির নির্ধারিত বাজার না থাকায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য দিচ্ছেন। তাই সরকারি সহায়তা চান খামারিরা।

বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামান রতন বলেন, মধু অনেক উপকারী এবং লাভজনক ব্যবসা। যারা মধুচাষ করেন সরকার যদি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন, তাহলে বিশ্বের বাজারে এ দেশের মধু ভালো জায়গা করে নেবে। সরকারি সহায়তা পেলে বেকার যুবকরা মধু চাষে আগ্রহ হবে।

এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রকিবুল হাসান বলেন, অনেকেই মনে করেন মৌমাছির কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। আসলে মৌমাছির পরাগায়নের ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক ভালো হয়, ক্ষতি হয় না। মৌমাছি থাকলে সে এলাকার ফসলে ক্ষতিকর পোকামাকড় কমবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। এজন্য বেশি বেশি মৌ-খামারি প্রয়োজন। মধু সংগ্রহের সুবিধার্থে সরকারিভাবে রিফাইন যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হলে বাড়তি মধু উৎপাদন হবে বলেও জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুরাদনগরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২ জনের মৃত্যু

প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

কুষ্টিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ ভোমরারা হতাশ হয়েছেন : নুর

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

এবার চট্টগ্রামে সাংবাদিককে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

এনসিপির হয়ে নির্বাচন করব কিনা সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ

সবাইকে টেস্ট খেলানো জরুরি নয় : জোরাজুরিতে দেউলিয়ার শঙ্কা

প্রবাসেও আপ বাংলাদেশের কমিটি ঘোষণা 

১০

ইসরায়েল পুড়ছে রেকর্ড তাপমাত্রায়

১১

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার চেক দিল যমুনা অয়েল

১২

অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা-অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

১৩

৩০০ আসনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ 

১৪

ড্রোন শো পরিচালনার প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন ১১ জন

১৫

সামাজিক কাজে অবদান রাখায় নিবন্ধন পেল প্রভাত

১৬

স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাসে মন গলেনি, নতুন কর্মসূচি ছাত্র-জনতার

১৭

শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে বস্তিবাসীদের অবস্থান

১৮

পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে : চরমোনাইর পীর

১৯

চট্টগ্রামে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা মেয়রের

২০
X