শরীয়তপুরের নাড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার লঞ্চঘাট এলাকায় জয়ন্তী নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এতে নদীতে কয়েকদিন ধরে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। নদীপথ ব্যবহার করে মালামাল আনা-নেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ ও ব্যবসায়ী।
নড়িয়া উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘড়িষার লঞ্চঘাট সংলগ্ন জয়ন্তী নদীতে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ শুরু হয়। সেতুটির নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে নিয়াজ কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ষড়িষার লঞ্চঘাট সংলগ্ন নতুন কংক্রিটের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেতুর দুই পিলারের মধ্যখানে কয়েকশ লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। এতে করে এ নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুটি নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৌপথটি নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কৃষক, ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি গুরুত্ব রাখে।
এ নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে মালামাল নিয়ে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ঘড়িষার বাজার, কার্তিকপুর বাজার,রামভদ্রপুর বাজার, ভেদরগঞ্জ বাজার, মোল্লার হাট বাজার, সখিপুর বাজার সহ প্রায় সাত লাখ মানুষের নিয়মিত কেনা-বেচার নৌরুট। এ ছাড়া দুই উপজেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত হাজার হাজার টন আলু, পেঁয়াজসহ শাকসবজি পরিবহন করে স্থানীয় বাজার, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মুনসুর শেখ বলেন, একসময় ঢাকা থেকে লঞ্চে করে আমাদের বাজারে মালামাল আনা-নেওয়া করেছি। এখন নদীর বিভিন্ন জায়গায় ভরে গেছে তাই ট্রলার দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করি। ঠিকাদার যখন সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু করে তখন নদীর দুপাশে অন্তত ৫০ ফুট করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। তখনই নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল। নদীর যতটুকু অংশ বাকি ছিল, সেটাও এবার বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে সম্পূর্ণভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। যে কারণে এ নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বিপাকে আছেন। আমাদের এ পাঁচটি বাজারে প্রায় সাত লাখ মানুষের মালামাল নিয়ে নদীপথে যাতায়াত করতে হয়। আমাদের দাবি, পাশে দিয়ে একটু জায়গা করে দিলে আমরা মালামাল নিয়ে যাতায়াত করতে পারব।
ঘড়িষার বাজারের ব্যবসায়ী সাহেব আলি বলেন, দেশের ছোটখাটো যেকোনো সেতু নির্মাণের সময় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে তারপর কাজ করা হয়। কিন্তু এ পথটিতে এত নৌযান চলাচল সত্ত্বেও কেন বিকল্প রোড রাখা হলো না, তা বোধগম্য নয়।
ভেদরগঞ্জ বাজারের ট্রলারচালক মো. বাবুল বলেন, এ নৌপথ ব্যবহার করে নিয়মিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে মালামাল আনা–নেওয়া করি। নদী বন্ধ থাকায় মালামাল নিয়ে যেতে পারছি না। এ নৌপথ ছাড়া ঢাকা থেকে মালামাল আনার বিকল্প কোনো পথ নেই। সড়ক পথে অনেক খরচ হয় ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া আমাদের শরীয়তপুরের রাস্তাঘাট প্রচুর উন্নত না। ভোগান্তির কথা বাদই দিলাম। আমরা চাই আমাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করে নৌযান চলাচলের সুযোগ করে দিক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়াজ কনস্ট্রাকশনের মালিক রুবেল খান নৌপথ বন্ধ রাখার বিষয়ে রুবেল খান বলেন, গার্ডারের কাজ করতে হলে খুঁটি বসিয়েই করতে হবে। আমাকে জেলা প্রকৌশলী ফোন করেছে। আমি বিকল্প রাস্তা তৈরি করে দিব।
শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, নদীপথ বন্ধ করে গার্ডারের কাজ করা যাবে না। আমি ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলে দিয়েছি, তারা বিকল্প ব্যবস্থা করে ওখানে কাজ করবে।
মন্তব্য করুন