দিনাজপুরে খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শুধু পাইলিংয়েই আটকে আছে। এ অবস্থায় চলাচলের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা কাঠ-বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছেন।
রোববার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। কবে আবার কাজ শুরু হবে তাও নিশ্চিত নয়।
জানা যায়, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইছামতী নদীর বটতলী সাঁকোর পাড় এলাকায় এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার সেতুর পাইলিংয়ের কাজ করে আংশিক বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দেয়।
পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতুর কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু এত বছরে কেবল সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সময়মতো সেতুর কাজ শেষ না হওয়াই দুর্ভোগে পড়েছেন ইছামতী নদীর দুই পাড়ের মানুষ।
যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজে, বিশেষ করে বর্ষাকালে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অসুস্থ, গর্ভবতী ও স্কুলপড়ুয়াদের অনেক দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বাজারে যেতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে।
সাঁকোপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা চাই, সেতুর কাজ তাড়াতাড়ি হোক। কয়েকদিন আগে সাঁকো থেকে এক মহিলা পড়ে আহত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
বড়বাড়ি এলাকার ৮০ বছর বয়সী আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘এ দুঃখ থুবার জায়গা নাই-বা। মন কান্দেছে-বা হামার কি হক নাই-বা। এই কাঠের ব্রিজ থেকে এক বয়স্ক মানুষ পড়ে গিয়া পাও ভাঙ্গি ফেলাইছে। গরিব মানুষ আমরা বন্যার সময় যে কী কষ্ট-বা। এই দুঃখ কষ্ট থুবার জায়গা নাই।’
দুবুলিয়া এলাকার বাসিন্দা নবিউল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষাকালে দুপারের লোকের সমস্যার শেষ নাই। এ পাড়ের লোকে ওপাড়ে জমি, ওপাড়ের লোকের এপাড়ে জমি থাকায় গরু-ছাগল নিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, ‘প্রতিবছর সাঁকো তৈরি করে দিতে হয়। এবার কাঠের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছি। গত বছরে বাঁশের সাঁকো থাকার কারণে প্রতিবছরে চার-পাঁচবার মেরামত করতে হয়। এ সেতু দিয়ে এলাকায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত। সেতুটি নির্মাণ না হলে প্রতিবছর ভোগান্তি পোহাতে হবে বাসিন্দাদের।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এহেতেশামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এফ এম খাইরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সেতুর অবশিষ্ট কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি দ্রুত কাজ শুরু করবে।’
মন্তব্য করুন