অলোক রায়, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৮ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে ব্যস্ত মানিকগঞ্জের তাঁতিরা

তাঁতের কাপড় বুনছেন কারিগর। ছবি : কালবেলা
তাঁতের কাপড় বুনছেন কারিগর। ছবি : কালবেলা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ঘুণে ধরা তাঁতপল্লিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কারিগর আর মালিকরা উৎসবমুখর ব্যস্ততায় দিন পার করছেন। ঈদ এলেই তাদের মনে বইতে থাকে আনন্দের ঢেউ। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের উৎসব ঘিরে তাদের এ ব্যস্ততা।

তাঁত মালিকরা যেমন বাহারি ডিজাইনের শাড়ি অর্ডার পাচ্ছে, তেমনি শ্রমিক বা কারিগররাও সেগুলো রাতদিন তাঁত বুনে আয় করছেন মোটা অঙ্কের টাকা। পরিবারের চাহিদা মেটানোর স্বপ্ন যেন শুধু এক মাসেই বুনে থাকেন তারা। তাঁত ব্যবসায়ীরা আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখের পাইকারি ও খুচরা বাজার ধরতে চান। তাই উপজেলার বিভিন্ন তাঁত কারখানায় এখন সরগরম।

সরেজমিন উপজেলার চাচিতারা, জালশুকা, নতুন ভোয়া, হামজা, সাভার, আগ সাভার এলাকায় দেখা যায়, খুটখাট আওয়াজে মুখরিত তাঁতপল্লি। কেউ হাতে বুনিয়ে কেউ বা মেশিনে বিদ্যুৎচালিত তাঁতে বুনছে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা রকম ডিজাইনের শাড়ি। মৌসুম ছাড়া শাড়ি কাপড় না চলায় অনেকেই ঈদকে সামনে রেখে অগ্রিম বাহারি ডিজাইনের কাপড় তৈরি করে রেখেছে। ঈদ বা বিভিন্ন উৎসবে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবে এই আশায়।

বরাইদ ইউনিয়নের সাভার গ্রামের তাঁত মালিক রজ্জব আলী বলেন, অন্য কোনো কাজ না থাকায় বাপ-দাদার এ পেশায় নিয়োজিত আছি। কয়েক বছর এ ব্যবসায় লোকসানের মধ্যে ছিলাম। সামনে ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা শাড়ি এবং নানা রকম অর্ডারের শাড়ি বিক্রি করে লাভে মুখ দেখব। তবে ঈদ, বিভিন্ন উৎসব ছাড়া আমাদের কষ্ট দেখার কেউ থাকে না।

দিঘলিয়া ইউনিয়নের চাচিতারা গ্রামের তাঁত মালিক পলান বেপারি বলেন, আগের মতো এখন তেমন কাপড় চলে না। তবে ঈদ এলে অর্ডার পাই। সুতা ও রঙের দাম বেশি, অন্যদিকে শাড়ি বানানোর কারিগরের মজুরিও বেশি। কোনো রকম এ পেশা টিকে আছে মৌসুমি ব্যবসায় আশায়।

কাউয়াখেলা গ্রামের তাঁত শ্রমিক ৫৫ বছর বয়সী কাশেম বলেন, তার দুই ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। প্রতিদিন বাড়ি থেকে আসেন কাপড় তৈরি করতে। সংসারে ছেলেমেয়েদের খরচ জোগাতে হিমশিম খেলেও কোনো রকম চলছে যান্ত্রিক জীবনের মতো। ঈদ এবং বিভিন্ন মৌসুমের এক মাস আগে থেকেই ব্যস্ততা বাড়ে আর মজুরি যা পাই তাই দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচসহ সংসার চলে।

এ বিষয়ে বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই কালবেলাকে বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁত সম্প্রদায় বরাইদ ইউনিয়নে। অতীতে প্রায় এক হাজার তাঁতি ছিলেন। এখন শতাধিক তাঁতি এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। তাদের বানানো শাড়ি কাপড় টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে রঙের দাম, সুতার দাম চড়া হওয়ায় বেশিরভাগ তাঁতি বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁত শিল্প ধ্বংসের দিকে। তাঁতিদের আগের মতো জমজমাট ব্যবসা পরিচালনার জন্য সরকারকে কাঁচামালের দাম কমিয়ে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাই।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, সাটুরিয়ার তাঁত শিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। সাটুরিয়ার উৎপাদিত তাঁতের কাপড় দেশের নামিদামি ব্যান্ডের শোরুমে চলে যায়। বর্তমানে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। সারা বছর যাতে তাঁতের কারিগরদের কাজ থাকে, সেটা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৬ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

ইরান-ইয়েমেনের একযোগে হামলা ইসরায়েলে

চলন্ত বাসে গার্মেন্টস কর্মীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, অতঃপর...

ইরানের নবম দফার হামলায় জ্বলছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের সংখ্যা জানাল ইরান

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৬ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি হটলাইন চালু

অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে বড় জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু পিএসজির

১০

এবার ইরান-ইয়েমেন থেকে যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে

১১

দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ, মামলায় আসামি ১৫৯

১২

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দাপ্রধান নিহত

১৩

দাউ দাউ করে জ্বলছে ইসরায়েল

১৪

ইসরায়েলের বিমানবন্দরে আঘাত হানল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

১৫

নেতানিয়াহুর বাসভবন এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

১৬

এবার ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল ছাড়তে বলল ইরান

১৭

মুসিয়ালা ম্যাজিক! অকল্যান্ডকে ১০-০তে গুঁড়িয়ে দিল বায়ার্ন

১৮

ইসরায়েলিদের পালাতে বলল সেনাবাহিনী

১৯

ইরানের হাইপারসনিক ইসরায়েলের হাইফা তেল আবিব ও নেগেভ বিমানঘাঁটিতে আঘাত করেছে

২০
X