বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
এমএ বশার, বাউফল (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ১১:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ০১:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ফুল-ফসলের বিষে কমছে ফুলটুনি

কালবেলার বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি এমএ বশারের বাড়ি থেকে তোলা ফুলটুনি পাখি। ছবি : কালবেলা
কালবেলার বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি এমএ বশারের বাড়ি থেকে তোলা ফুলটুনি পাখি। ছবি : কালবেলা

ছোট পাখি ফুলটুনি। গায়ের রঙে রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। ওড়ার ঢঙও দেখার মতো। ঠোঁটে লেগে থাকে গান। চঞ্চল ফুলটুনি সারাক্ষণ ছুটে বেড়ায় এ-গাছ থেকে ও-গাছে। বাসা তৈরির ক্ষেত্রেও এদের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য।

ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ানো প্রতিবেশী এই পাখিটি মধু চুষকি বা মৌটুসি নামেও পরিচিত। বাড়ির আঙিনায় শিম লতায়, সবজিক্ষেতে কিংবা আশপাশের ঝোঁপঝাড়ে এদের চঞ্চল বিচরণ। তবে ফুল-ফসলে ছিটানো বিষে দিনে দিনে কমছে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এই পাখি।

ফুলটুনি বা মৌটুসির ইংরেজি নাম পার্পল-থ্রোটেড সানবার্ড। বৈজ্ঞানিক নাম- লেপ্টোকোমা স্প্রেটা। ১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার কাস্তের মতো নিম্নমুখী বাঁকানো ঠোঁট। লম্বায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার। ওজনে মাত্র ৭ থেকে ৯ গ্রাম। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে আলাদা। রোদের আলোয় পুরুষ পাখিটির গলার গাঢ় বেগুনি ব্যান্ড, পাখার গোড়ার অংশ ও মাথার চাঁদি থেকে চোখ ধাঁধানো চিকচিকে দ্যুতি ছড়ায়।

ব্যান্ডের নিচে বুক কমলা-হলুদ। বুকের কমলা, হলুদ রং পেছনের দিকে সাদায় মিলেছে। পায়ুপথের পালক সাদা। কালো পা। স্ত্রী পাখির ঘাড় মাথা ও পিঠ জলপাই রঙের। ধূসর গলা ও হলুদ বুক। পেট সাদাটে। ফুলের মধ্যে লম্বা ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু খাওয়ার সময় পাখা কাঁপিয়ে শূন্যে স্থির হয়ে থাকতে পারে। নান্দনিক সেই দৃশ্য বেশ উপভোগ্য।

ফুলটুনি, দুর্গাটুনি, বেগুনি-গলা মৌটুসি, সিঁদুরে-লাল মৌটুসি, মাকড়সাভূক মৌটুসি, নীল টুনি, সোনা চোখা, সিঁদুরে-হলুদ টুনি, সরষে টুনি, চুনিমুখোসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌটুসি পাখির মধ্যে দেখতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চঞ্চল বেগুনি-গলার ফুলটুনি। এদের ঠোঁটে গান যেন লেগেই থাকে। খাবারের সন্ধানে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়, ডানা ঝাপটায় আর নাচেগানে মেতে থাকে আনন্দে। কলার মোচা, শিম, নারিকেল, রঙ্গনসহ বিভিন্ন ফুলের মধু আর তাল খেজুরের রস খেতেই এরা বেশি পছন্দ করে। ফুলের মধু প্রধান খাদ্য। খাবার সংকটে ছোট কীটপতঙ্গ খায়।

ঋতু বদলে তখনো ফুরফুরে ফাল্গুনি হাওয়া। প্রকৃতিতে বাসন্তী রং শেষ হয়নি। ফুলটুনির বাসা বাঁধার দিন। ঠিক এ সময় পাখিটিকে খুব কাছে থেকে দেখা ও এদের জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণের সুযোগ ঘটে। একদিন বাসার ছাদে কাজ করার সময় দেখা মেলে সুরেলা ফুলটুনির।

সচরাচর এরা গাছের শাখায় ঠেকিয়ে ঝুলন্ত ডিম্বাকৃতির বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি বাসা বানায় ও ডিমে তা দেয়; ডিম সংখ্যায় দুটি ও সচরাচর ফোঁটা দাগযুক্ত। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।

বাউফল উপজেলার কালিশুরী ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা বেগম বলেন, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড়শ প্রজাতির মৌটুসি বা ফুলটুনি পাখির কথা জানা গেছে। আমাদের দেশে আবাসিক পাখি ফুলটুনির ৯টি প্রজাতির সন্ধান মেলে। বাড়ির আশপাশে ঝুলন্ত ডালে এমনকি কাঠের তৈরি দোতলা ঘরের বারান্দায়, কার্নিশেও বাসা বানাতে দেখা যায়। তিনি জানান, সাধারণত মার্চ থেকে জুন এদের প্রজনন সময়। কখনো কখনো তা জুলাই-আগস্টেও গড়ায়। বাসা বানায় থলের মতো। বাসার ওপরের দিকে থাকে ঢোকার পথ। ভারসাম্য রক্ষায় মাকড়সার জালে ঝুলানো থাকে লতাপাতা। ফুলটুনি অত্যন্ত চঞ্চল ও চতুর।

তাসলিমা বেগম বলেন, আবহাওয়ার বৈরী প্রভাব, গাছপালা, ঝোপ-জঙ্গল কমে যাওয়া এবং ফুল-ফসলে কীটনাশক ছিটানোয় ফুলটুনির মতো ছোট পাখিগুলো কমছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১০

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১১

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১২

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৩

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

১৪

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

১৫

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

১৬

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে যা বললেন তামিম

১৭

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১৮

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১৯

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

২০
X