রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বালানি সংকটে চলে না জেনারেটর। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো হাসপাতাল। এতে প্রচণ্ড গরমে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসক ও নার্সদের রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালে একটি জেনারেটর আছে। কিন্তু জেনারেটর চালাতে যে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন, তার জন্য চাহিদার চেয়ে অনেক কম টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চালায় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে বেশির ভাগ সময় জেনারেটর চালানো হয় না। জ্বালানি তেলের জন্য বরাদ্দ কম দেওয়ায় রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও নিয়মিত চালানো হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকে জানতে পেরেছি, অ্যাম্বুলেন্স ও জেনারেটর বাবদ আগের অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। চলতি অর্থবছরে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি বাবদ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। অথচ এর আগের প্রায় আট লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া টাকা পরিশোধ করব, নাকি বর্তমান কাজ চালাব। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ও জেনারেটর চালানো সম্ভব হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত জেনারেটর বাবদ প্রায় ৯৫ হাজার ৫১২ টাকা জ্বালানি খাতে বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে জেনারেটর চালানোর জন্য ৯০ থেকে ১০০ লিটার ডিজেল প্রয়োজন। সে হিসাবে প্রতিবছর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই অর্থবছরে এ পর্যন্ত এই খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তারপর প্রতি মাসেই আমি অর্থ বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি লিখেছি।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত বেডের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতেও বেড বিছিয়ে শুয়ে আছেন অনেক রোগী। বারান্দায় ফ্যান না থাকায় পাখা দিয়ে বাতাস করছেন রোগীর স্বজনরা। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে রোগীতে ভরা। পাশাপাশি বারান্দায়ও শয্যা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বারান্দায় রোগী থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। গত রোববার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অন্ধকারে ছেয়ে যায়। এ সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের টর্চ ধরে রোগীর পাশে স্বজনদের থাকতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমে রোগী ও তাদের স্বজনদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
সাধারণ রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বারান্দায় ফ্যান না থাকায় ও বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর না চালানোর ফলে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। উপজেলার স্বরূপার চকের আয়জল পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার এক হাতে স্যালাইন চলছে। পাশে বসে আছেন স্ত্রী। ভিড়ের মধ্যে গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। এর মধ্যে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায, তার কষ্ট আরও বেড়ে যায়। পরে তার স্ত্রী মোমবাতি জ্বালান।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এক রোগীর আত্মীয় শারমিন আক্তার বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে আমার রোগীর কষ্ট হচ্ছে। তীব্র গরমে সে হাঁসফাঁস করছে। বিদ্যুৎ গেলে রাতেও জেনারেটর চালু করা হয় না। নায়েব আলী নামের একজন বলেন, ‘আমার বাচ্চার জ্বর এসেছিল, এ জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তবে রাতে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে সে ঘুমাতে পারছে না। গরমে কান্নাকাটি করে।
মন্তব্য করুন