চট্টগ্রামে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আগমনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ। নগরীতে প্রতি ১০০ গজ অন্তর সিএমপি ও জেলা পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন।
এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার চলাচলের পথে নিরাপত্তার স্বার্থে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নগরীর লালখানবাজার সড়কের মুখ এবং কাজীর দেউড়ীর মুখ। এ ছাড়া সিআরবি প্রবেশের মুখ দিয়ে কোনো গাড়ি ঢুকতে এবং বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
বুধবার (১৪ মে) সকাল সোয়া ৯টার দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছান তিনি। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামে এটাই তার প্রথম সফর।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি অনুসারে, তিনি সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে এক সভায় যোগ দেন। সেখানে বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসেন। সেখানে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এর পর তিনি হাজি মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত তার দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করবেন এবং পাশের মাঠে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।
সিএমপি সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের আনুমানিক ৬ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মাঠে রয়েছেন। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ, সিআইডি, ডিবি পুলিশ ও ট্রাাফিক পুলিশ রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার গাড়িবহর নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়কের একপাশ অল্পসময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সামনে সব ধরনের গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে সক্রিয় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১০০ গজ অন্তর তাদের অবস্থান। কোথাও দুজন কোথাও চারজন আবার কোথাও ৭-৮ জনের টিম রয়েছে। ভোরের যান চলাচল একটু বেশি দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক ফাঁকা ছিল। মানুষজনকে হেঁটে ও রিকশায় চড়ে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে। সড়ক সাময়িক বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর লালখান বাজার মোড়, কাজির দেউড়ি মোড়ে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রয়েছেন। লালখান বাজার থেকে কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। চকবাজারগামী যাত্রীপরিবহন গাড়িগুলো দামপাড়া ওয়াসা হয়ে কাজির দেউড়ি মোড়ে চলাচল করছে। পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু থেকে সার্কিট হাউসগামী সড়কের একপাশে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। পথচারী কয়েকজন জানান, আজ রাষ্ট্রপ্রধান চট্টগ্রামে এসেছেন। সাময়িক অসুবিধা তো হবে- এটাই স্বাভাবিক। সবকিছু মানিয়ে চলতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান যে কোনো বিভাগ, জেলা, উপজেলায় গেলে নিরাপত্তা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন ঘটবে। তবে এ নয় যে, এ বিঘ্ন সারা মাসের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরা নাগরিকরাও তার নিরাপত্তায় কাজ করা দরকার। যেহেতু তিনি আমাদেরই প্রতিনিধি। আমাদের জন্য কাজ করবেন এবং কথা বলবেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদা বেগম কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিএমপি ও জেলা পুলিশ। আমরা সমন্বয় করে মাঠে কাজ করছি। উপদেষ্টার সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নগরীর কিছু কিছু সড়কে যানচলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গতকাল থেকে নগর ও জেলা পুলিশের ছয় হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়ান রয়েছে। পরিস্থিতি সুন্দর ও স্বাভাবিক রয়েছে।
মন্তব্য করুন