কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে সিমেন্টবাহী লরির নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেটকারের ৪ যাত্রী নিহত হয়েছে। একই সময়ে লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিএনজি অটোরিকশার আরও দুই যাত্রীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতরা একই পরিবারের বাবা, মা ও দুই ছেলে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), তাদের বড় ছেলে আবুল হাশেম (৫০) ও অপর ছেলে আবুল কাশেম (৪৫)। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন বড় ছেলে আবুল হাশেম। তারা গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মুদাফ্ফরগঞ্জ থেকে কুমিল্লা শহরে মেয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে আসছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে ইউটার্ণে একটি লরি উল্টে গিয়ে ওই প্রাইভেটকারকে চাপা এবং একটি সিএনজি অটোরিশকাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় অপর একটি প্রাইভেটকারেও আঘাত করে। সিএনজি যাত্রী ও চালক ছিটকে বেরিয়ে গেলেও চাপা পড়ে থাকা প্রাইভেটকার থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চৌয়ারাবাজার ফায়ার স্টেশনের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেছে। প্রাইভেটকারে যারা ছিলেন চালকসহ ৪ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
উদ্ধার কাজে থাকা ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক আনিসুর রহমান ও পুলিশ সদস্য কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ইউটার্নে ঢাকামুখী লেনে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টো পথে এসে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই লরিটি বাসটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে উল্টে যায়। এ সময় বাসের পিছনে থাকা ওই প্রাইভেটকারটি চাপা পড়ে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত লরিটি একটি সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের চালকসহ ওই চার যাত্রী নিহত হয়।
এছাড়া সিএনজিতে থাকা আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তারা আরও জানান, পুলিশ মরদেহ ও দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করে ময়নামতি হাইওয়ে থানায় নিয়ে গেছে। লরিটি আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, মরদেহ ৪টি কুমেক মর্গে রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরা আসছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তারা চাইলে মামলা হবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ইউটার্ন-পুরো মহাসড়কের একটি বিপজ্জনক স্থান। এখানে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম এই মহাসড়কটিকে বলা হয়ে থাকে অর্থনীতির লাইফ লাইন। একশ্রেণীর লোভী কর্মকর্তাদের অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের এক দশক পরেও মানুষকে জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে মহাসড়কের এ অংশ নির্মাণত্রুটির কারণেই মারাত্মক বিপদজনক-প্রতিনিয়ত এখানে অপেক্ষা করে মৃত্যুদূত। এই মৃত্যুর দায় কি নেবেন ওই কর্মকর্তারা যাদের বিরুদ্ধে ফ্লাইওভার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ এসেছিল।
উল্লেখ্য, আট বছর আগে মহাসড়কে ২৭টি ত্রুটি ধরা পড়ে বুয়েটের এক্সপার্টদের গবেষণায়। বহুপরে ইইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হলেও কাজ চলছে ধীরলয়ে।
মন্তব্য করুন