ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল এলাকায় জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল সেখানে হামলা চালিয়ে নির্মিণাধীন স্থাপনা ভাঙচুর ও পুরোনো বাড়িটির ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, বিগত সরকারের আমলে যতগুলো বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে, সবকটিতেই রওশন এরশাদ সমর্থন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। গণতন্ত্র হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। জাতীয় পার্টির নেতারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকারকে গণহত্যায় পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। এখন তারা গা বাঁচাতে সুশীলদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুশীলতার আড়ালে তারা আওয়ামী লীগকেই পুনর্বাসন করতে চায়।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িকে ‘দালাল মহল’ হিসেবে চিহ্নিত করা করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি রওশন এরশাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বাড়িটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বজলুর রহমান ১২ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে স্থাপনা নির্মাণের কাজও শুরু হয়।
এ নিয়ে ২৩ এপ্রিল বাড়িটির সামনে মানববন্ধন করে বাণিজ্যিক ভবন না করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে সেখানে হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
রেস্টুরেন্টের মালিক বজলুর রহমানের শ্যালক আহসানুল করীম জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা হামলা চালিয়ে এ ভাঙচুর চালায়। ‘দালাল মহল’ আখ্যা দিয়ে রওশন এরশাদের পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় এখানে ভাঙচুর করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদ বলেন, ‘দালাল মহলকে’ বাণিজ্যিক ভবন বানানোর পাঁয়তারা হওয়ায় সেটি বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিলেও সেটি বন্ধ হয়নি। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে।
মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আউয়াল সেলিম জানান, সুন্দর মহলের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে রওশন এরশাদের মায়ের স্মৃতিবিজড়িত কবর রয়েছে। অনেকে এখন কারণে-অকারণে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। দলের অবস্থা এখন ভালো না। রওশন এরশাদের নির্দেশে বাড়িটিতে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি রেস্টুরেন্টের কাছে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ১২ বছরের জন্য তারা এখানে থাকতে পারবেন। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ টাকা। শুনেছি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, রওশন এরশাদের বাড়িতে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ কাজ চলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুফিদুল আলম বলেন, বাড়িকে ঘিরে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ থাকায় সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা না করাই উচিত। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন