বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাসহ আরও দুটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে শুনানি শেষে তাকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান। তিনি বলেন, সাবেক মেয়র আইভীকে আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা ও অন্যটি হত্যাচেষ্টা মামলা।
এর আগে আদালতে শুনানির জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানিতে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে করা পাঁচটি মামলার মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান কালবেলাকে বলেন, সাবেক মেয়র আইভীকে আরও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা ও আরেকটি হত্যা চেষ্টার মামলা। তার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে।
ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সাবেক মেয়র আইভী ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন। আদালত সেটা মঞ্জুর করে তাকে ভার্চুয়ালি নেওয়ার সুযোগ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর ক্ষেত্রে আসামিকে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও হবে। ফলে এসব দিকে বিবেচনা করে হয়তো তাকে ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
একটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছর ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় শামীম ওসমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়লে বাদীর স্বামী রিকশাচালক তুহিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরে তুহিনের স্ত্রী আলেয়া আক্তার বাদী হয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে ১৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাটি করেন।
অন্য মামলার এজাহারে বলা হয়, একই দিনে (২০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শামীম ওসমান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হকার নাদিমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তিনি বাঁ-পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই পা কেটে ফেলতে হয়।
এ ঘটনায় নাদিমের বাবা দুলাল হোসেন বাদী হয়ে ১ সেপ্টেম্বর শামীম ওসমান ও তার ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় পুলিশের একটি দল শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাড়ি চুনকা কুটিরে প্রবেশ করেন। এ সময় আইভীর গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা ও তার নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে এলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইভীর বাড়ির দিকে যাওয়ার দুটি রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও আইভীর সমর্থকরা। আশপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে আইভীর বাড়ির দিকে রওয়ানা দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
পরে শুক্রবার ভোরে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পথিমধ্যে তাকে বহনকারী গাড়ি বহরে হামলা করে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জের পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার তার জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। সাবেক মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় হত্যাসহ ৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন