চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচ

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচ উৎসবকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকেই এ দুটি উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

সোমবার (১৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, সাম্পান চট্টগ্রামের হার্ট। নিউইয়র্ক শহর যেমন কল্পনা করা যায় না হলুদ ট্যাক্সি ছাড়া তেমনি চট্টগ্রাম কল্পনা করা যায় না সাম্পান ছাড়া। তাই এবার আসার পেছনে প্রথমে এসব উৎসবের তালিকা করার জন্য কাজ দিয়েছি আপাতত শিল্পকলা একাডেমিকে। তারা তালিকা করছে। এ তালিকা হওয়ার পরে এগুলো আমাদের ক্যালেন্ডারের মধ্যে ঢুকবে এবং ঢাকা থেকে আমরা এ কাজগুলোকে ফ্যাসিলেটেইড করার চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, এটা মানুষেরই আয়োজন, স্থানীয় পর্যায়ে হচ্ছে। সরকারের সাহায্যের দিকে তারা কখনও তাকায়নি। কোনো স্বীকৃতিও তারা চায়নি। তারা তাদের কাজ করছে। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তার দেশের মানুষের করা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা এবং সেই কাজটা আমাদের করা উচিত। জব্বারের বলীখেলা যারা আয়োজন করেন আমরা তাদের সঙ্গে আগামী বছর থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হবে। এটা কয়েকটা ফর্মে কাজ করবে। পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে, এটার কালচারাল সিগনিফিকেন্ট আরও কীভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটার ক্ষেত্রে। এটা আমরা ওনাদের সঙ্গে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে আগাব।

উপদেষ্টা বলেন, জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচকে আমাদের কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে আমাদের ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলো। শুধু চট্টগ্রামে হবে তা না, সারা দেশের হবে। আমরা তালিকা করার কাজ শুরু করেছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আমাদের সকল আগ্রহ, শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় না, সকল মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ, মানে আমাদের উন্নয়নের দর্শনই হচ্ছে দালান বানাও, দালান বানাও, দালান বানাও। দালানের ভেতরে কী হবে, এটার কোনো খবর নেই। শিল্পকলা একাডেমি দেশের বহু জায়গায় ৬০০-৭০০ সিটের অডিটোরিয়াম বানিয়েছে, যেখানে ৫০ জন লোকও যায় না, মাসে পাঁচ-ছয়বারও ব্যবহার হয় না।

শিল্পকলার পাঠ্যসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পকলাগুলো কবে একটা কী কারিকুলাম বানিয়ে দিয়ে গেছে, ওই কারিকুলামের মধ্যেই আমরা আটকে আছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হচ্ছে মিউজিক, গান। একেক অঞ্চলে গানের একেকরকম ভ্যারাইটি। আমাদের যে অ্যাসেট আছে, সেটাকে আমরা নিজেরাও ব্যবহার করিনি, বাইরের দুনিয়ায়ও প্রদর্শন করিনি।

সরকারেরে এ উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামে মোস্ট পাওয়ারফুল হচ্ছে রক মিউজিক। বাংলাদেশের রক মিউজিক কিংবা যেটাকে আমরা ব্যান্ডসংগীত বলি, এটাতে সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানদের। কিন্তু চট্টগ্রামের শিল্পকলার সঙ্গে রক মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানরা শিল্পকলাকে তার আখড়া ভাবতে পারল না, এটা শিল্পকলার ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা।

চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরে উপদেষ্টা আরও বলেন, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর আমরা পরিদর্শন করেছি। এটা গত ১৫-১৬ বছর অলমোস্ট ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ জন্য মাস তিনেক আগে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করেছি এটা নিয়ে। সেই মিটিংয়ে প্রথম কাজটা আমরা করেছি যে, এটার যে বরাদ্দ ছিল সেটা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এবার এখানে এসে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের পর আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, শুধু বরাদ্দ বাড়ানোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা।

উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, সেটা করার জন্য দরকার হচ্ছে প্রপার কিউরেটর, যারা বিষয়গুলো জানবেন এবং এটা শুধু চট্টগ্রামের বিষয় নয়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু করে উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী সিগনিফিকেন্ট কাজ করেছেন, সবগুলো জিনিস যেন আসে। এ জিনিসগুলো কীভাবে সঠিকভাবে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করা যায়, এজন্য একটা কিউরেটর টিম লাগবে, সেই টিমটা আমরা তৈরি করছি।

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি গবেষণা টিমও তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে ফারুকী বলেন, পাশাপাশি কিউরেটর টিমকে হেল্প করার জন্য একটা গবেষণা টিম প্রয়োজন, যারা জিয়াউর রহমানের ওপর গবেষণা করে জানাবে কী কী হাইলাইট হবে এবং পয়েন্টগুলো কী কী। এটা আশা করি আমরা আগামী মাসখানেকের মধ্যে করতে পারব। তারপর আমরা মিউজিয়ামের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করব। কতদিন লাগবে সেটা আমি এই মুহূর্তে প্রেডিক্ট করতে পারছি না, তবে কাজটা আমরা হাতে নিয়েছি এবং কাজটা আমরা শুরু করছি।

এদিকে প্রেস ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে একজন সাংবাদিক অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে ফারুকী কোন মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ের মধ্যে থাকি।

এর আগে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম ইনস্টিটিউট, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর ও জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ রাজধানীর কোথায় কী?

আজ থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হবে ভোজ্যতেল, লিটারে কত

শৈত্যপ্রবাহ বইছে তেঁতুলিয়ায়, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে

গরম পানি নাকি ঠান্ডা পানি, কোনটা খাবেন

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন চলছে

৮ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

সরকারি আবাসন পরিদপ্তরে বড় নিয়োগ

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

আজ টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না ঢাকার যেসব এলাকায়

আজ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

১০

খালেদা জিয়া সংগ্রাম, সাহস ও গণতন্ত্রের প্রতীক : কবীর ভূইয়া

১১

দেশের মাটিতেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান সাকিব

১২

মধ্যরাতে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

১৩

অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তসহ আরও যা আছে নতুন এমপিও নীতিমালায়

১৪

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে : বুলবুল

১৫

সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আমাদের মৌলিক অধিকার : মাসুদুজ্জামান

১৬

‎জকসু নির্বাচন / প্রার্থীদের ডোপটেস্ট আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর

১৭

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার 

১৮

সালমান এফ রহমানসহ ৬ জনের ‎বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা

১৯

ডা. আসিবুলের বেতন বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না : আদালত

২০
X