মহিপুর (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ০৬:৪৪ এএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০৭:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বেচে দিয়েছেন অনেকে, অনেকে দিয়েছেন ভাড়া

কুয়াকাটার মহিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ছবি : কালবেলা
কুয়াকাটার মহিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ছবি : কালবেলা

সারা দেশের মতো কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় আওয়ামী সরকারের আমলে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাথা গোঁজার জন্য মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়া হয়েছে। অথচ কুয়াকাটা এলাকার এসব ঘরে ঠাঁই হয়নি প্রকৃত ভূমিহীনদের। অভিযোগ রয়েছে, যারা ঘর পেয়েছেন তাদের অনেকেই এসব ঘরে থাকেন না।

অভিযোগে জানা যায়, কতিপয় অসাধু লোক নিজেদের স্বার্থে আইনের তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে তাদের বঞ্চিত করেছে। বরং আত্মীয় ও দলীয়করণের মাধ্যমে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, কুয়াকাটার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৪টি ঘরের মধ্যে আটটি ঘর শুরু থেকেই তালাবদ্ধ ছিল। পরে স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই ঘরের তালা খুলে অন্য লোকদের ওঠানো হয়েছে। তবে এখানেও উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লোক ওঠানোর অভিযোগ রয়েছে।

নয়াপাড়া আশ্রয়ণে বর্তমানে ৬৪ নম্বর ঘরে সালমা দম্পতি বসবাস করে। সালমা এই এলাকার বাসিন্দা নন। তার বাবার বাড়ি পাথরঘাটা এবং স্বামীর বাড়ি ঢাকায়। বাবা ও স্বামীর কোনো ঠিকানাতেই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাহলে নাম-ঠিকানাবিহীন একজন অপরিচিত নারী কীভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেলেন এ প্রশ্ন জনমনে। অবস্থা আরও জটিল হয় যখন জানা যায়, সালমার স্বামী একজন মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। কিছুদিন পর তার আসল পরিচয় প্রকাশ পায়। তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে ঘরটি খালি রয়েছে।

৫৩ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক কচ্ছপখালী গ্রামের মকবুল ফকিরের ছেলে শহিদ ফকির। তিনি তার নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি কুষ্টিয়ার জীবন নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে নিজ বাড়ি কচ্ছপখালীতে বসবাস করছেন। ৫২ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক আলাউদ্দিন ঘরটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় জহিরুল নামের একজনের কাছে বিক্রি করেছেন। ৪১ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক নুর হোসেন ঘরটি বিক্রি করেছেন সুমন নামের এক ব্যক্তির কাছে। তবে সুমন নিজে নন, সেখানে থাকেন তার বোন মুক্তা ও মুক্তার পরিবার।

৪০ নম্বর ঘরের মালিক নয়াপাড়া গ্রামের অতুল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে দুলাল বিশ্বাস। তিনি দিনের বেলায় মাঠে কাজ করেন এবং তার স্ত্রী বাবা-মায়ের দেখাশোনা করেন। রাতে তারা বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরে রাতযাপন করেন। কিন্তু দুলালের অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম তালা ভেঙে ঘরের মালপত্র বাইরে ফেলে দিয়ে কুয়াকাটার রেজাউল নামের একজনকে সেখানে উঠিয়ে দেন।

দুলাল বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমার বাবা নয়াপাড়া এলাকায় বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। আমরা পরিবারসহ যৌথভাবে সেখানেই থাকি। আমার দুটি সন্তান মারা যাওয়ার পর তাদের কবর আমাদের বাড়ির সামনেই রাখা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের সময় জমির পরিমাপে দেখা যায়, সন্তানের কবর খাস খতিয়ানের মধ্যে পড়ে গেছে। বিষয়টি সাবেক ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর স্যারকে জানালে তিনি ৪০ নম্বর ঘরটি আমার নামে বরাদ্দ দেন। কিন্তু বর্তমানে ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম আমার অনুপস্থিতিতে ঘরের সব মালপত্র বের করে অন্যকে বসবাসের সুযোগ করে দেন।’

অন্যদিকে, পটুয়াখালীর মহিপুর সদর ইউনিয়নের ইউসুফপুর মুজিব কেল্লাসংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৩ নম্বর ঘরটি এখনো তালাবদ্ধ রয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেখানে থাকেন না, কারণ তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। ৪৩ নম্বর ঘরের মালিক আল আমিনও সেখানে থাকেন না। সেখানে থাকেন তার খালাতো ভাই পরিচয়ের সুমন নামের এক ব্যক্তি। ৩৫ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক পপি তার বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরটি হনুফা নামের একজনের কাছে বিক্রি করেছেন।

এ ছাড়া মহিপুর মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজসংলগ্ন ২৭ নম্বর ঘরের মালিক আলমগীর ঘরটি নিজে ব্যবহার না করে এক অটোরিকশাচালকের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। যদিও ওই চালক দাবি করেন, তিনি ‘এমনিতেই’ থাকেন। এলাকাবাসীর বক্তব্য, যার নামে ঘর বরাদ্দ, তার যদি প্রয়োজন থাকত তাহলে সেখানে অন্য কেউ থাকত না।

জানা যায়, যাদের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই প্রকৃত গৃহহীন নন। তারা এসব ঘর আত্মীয়স্বজন বা অন্য লোকের কাছে গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মহিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. সোহরাফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘এখানে কয়েকটি ঘরে শুরু থেকেই কেউ থাকে না, আবার কিছু ঘরে মালিকের পরিবর্তে আত্মীয়স্বজন থাকে। তারা প্রকৃত ভূমিহীন কি না, আমি জানি না।’

মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী কালবেলাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তদন্ত করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২১ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

১০

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১১

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১২

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১৩

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৪

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৫

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৬

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৭

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৮

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৯

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

২০
X