পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২১ মে) দুপুরে সরেজমিনে শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, উপকারভোগীদের কাছ থেকে তিন মাসের চাল উত্তোলনের কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও বাস্তবে দুই মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসসহ মোট পাঁচ মাসের চাল দেওয়ার কথা রয়েছে। আজ তিন মাসের কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে দুই মাসের চাল দেওয়া হচ্ছে। চাল নিতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি কার্ডধারীর কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সের বাবদ ২০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে চালের টোকেন দেওয়া হচ্ছে না।
মাহবুব আলম নামে এক ব্যক্তি গিয়েছিলেন তার সহধর্মিণী ফিরোজ বেগমকে নিয়ে চাল উত্তোলন করতে। তিনি কালবেলাকে জানান, আমার স্ত্রীর কাছে ৩টা কাগজে স্বাক্ষর নিছে। কিন্তু চাল দিয়েছে দুই বস্তা। সবাই স্বাক্ষর করছিল, এজন্য সেও স্বাক্ষর করেছে। আরেক বস্তা দেওয়া হবে কি না সেটা বলে নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ বলেন, আমি জানতাম না যে চাল নিতে টাকা লাগবে। একশ টাকা কম ছিল বলে আমাকে চাল দিচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে এক চৌকিদারের কাছ থেকে টাকা ধার করে চাল নিতে হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, আজকে দুই বস্তা চাল দিছে কিন্তু স্বাক্ষর নিছে তিন বস্তার। দুইশ করে টাকা নিছে। চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের জন্য টাকা নিচ্ছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেবীগঞ্জ উপজেলার বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিডব্লিউবি কার্ডের ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের চাল বিতরণের জন্য খাদ্য অফিসকে চিঠি করে দেওয়া হয়েছে। এই মাসের মধ্যে পাঁচ মাসের চাল বিতরণ করা হবে। শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ২৫৫ জন কার্ডধারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হিসেবে পাঁচ মাসের মোট ৩৮ টন ২৫০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পঞ্চগড় জেলার উপ-পরিচালক একেএম ওয়াহেদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, পাঁচ মাসের চাল এই মাসে দেওয়া হবে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি দুই বস্তা করে হিসেবে চাল বিতরণ করেছেন।
তিন মাসের স্বাক্ষর নিয়ে দুই মাসের চাল দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করেন এবং ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিতে বলেন।
এদিকে দেবীগঞ্জ সরকারি খাদ্য গুদামের (এলএসডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোছা. জেসমিন আক্তার কালবেলাকে বলেন, আমাদের এখন ধান, চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। এর পাশাপাশি ভিডব্লিউবি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শালডাঙ্গা ইউনিয়ন ১৯ টন চাল উত্তোলন করেছে।
এদিকে ৩৮ টন ২৫০ কেজি বরাদ্দের মধ্যে ১৯ টন বা ৬৩৩ বস্তা চাল উত্তোলন করা হয়েছে। জনপ্রতি দুই বস্তা করে মোট ৫১০ বস্তা চাল বিতরণ করা হলেও এখনো বাকি রয়েছে ১২৩ বস্তা চাল। স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে তিন বস্তা চালের।
এ বিষয়ে শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মাস্টার রোলের কাগজে এবং বইয়ে দুই বস্তার স্বাক্ষর আছে। চাল উত্তোলন করা হয়েছে ৬৫০ বস্তা। তিন বস্তা করে তো দেওয়া সম্ভব না।
শুরুর দিকে ইউপি সদস্যরা তিনটা করে স্বাক্ষর নিয়েছিল, এটা শোনার পর আমি গিয়ে দুইটা করে স্বাক্ষর নিতে বলি। কেউ যদি তিনটা করে স্বাক্ষর দিয়ে থাকে তাহলে ভুল করে করেছে।
চাল বিতরণের সময় টাকা নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স তোলার অধিকার বা ক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদের রয়েছে। যেহেতু তারা একসঙ্গে চাল তুলতে এসেছে, তাই তাদের কাছ থেকে রশিদ দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন