পিরোজপুরের নেছারাবাদে বিদ্যালয়ে নিয়োগের নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের বিরুদ্ধে। পরে তোপের মুখে পড়ে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে উপজেলার ১নং বলদিয়া ইউনিয়নের বলদিয়া সেন্ট্রাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ে ১ জন করে ৪টি পদে অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী, দপ্তরি ও আয়া নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদের ছেলে ঢাকায় ব্যবসায়ী মো. এস এ সোহাগ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় স্কুলটি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বাহাদুর ও চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজুলেশনের মাধ্যমে বিদ্যালয় উন্নয়নের নাম করে একই পদে একাধিক নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে আয়া পদে নিয়োগ প্রত্যাশী ভুক্তভোগী ইসরাত জাহানের স্বামী মো. তানভীর আহমেদ কালবেলাকে অভিযোগ করে বলেন, আমি সামান্য একজন মুদি দোকানি। প্রধান শিক্ষক চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে। বহু কষ্টে ধারদেনা ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে তাকে দিয়েছি। কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ের যৌথ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি চেকের পৃষ্ঠায় সই দিয়ে টাকা তুলে নিতে বলেছে। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখি টাকা নেই। পরে স্থানীয়দের জানালে তাদের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তিন বছরে আমার অনেক সুদের টাকা গুনতে হয়েছে।
স্কুলে নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশপ্রহরী মো. মামুন জানান, নিয়োগের সময় তাকে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া দপ্তরি পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. ইসরাফিল আহমেদ চেয়ারম্যানের কাছে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও প্রধান শিক্ষকের কাছে ৩৮ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের স্কুলে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার হাজিরা খাতায় বর্তমান মাসে তিনদিনের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি। ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছে। যাদের চাকরি হয়নি তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির লোক টাকা নিয়ে থাকলে আমার কিছু করার নেই।
বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটিতে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। একাধিক লোক আমাকে অবহিত করেছেন। আমি সদ্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি হয়েছি। পরবর্তী মিটিংয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
নেছারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন দেখিয়ে পরোক্ষভাবে ঘুষ বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন