বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একইসঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। এদিকে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে দশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরের হাজার হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল থেকে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ও খেয়াঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা শহরের সঙ্গে সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়ার পাশাপাশি অমবস্যার প্রভাবে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। চুলা আগুনও জ্বালাতে পারেনি কোনো পরিবারের। এদিকে কুটিয়াল পাড়ার ব্যবসায়ীদের ধান, ডাল, বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
নদীবেষ্টিত এ উপজেলার সড়কে যাতায়াতের মাধ্যম ফেরি। জোয়ারের পানিতে ফেরির জেটি তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পানপট্টি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড পানপট্টি বোর্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
পানপট্টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিক মৃধা জানান, ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০-১৫ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে পানপট্টি ইউনিয়নের বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সতিরাম ও খরিদা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আরও ১০-১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে বেড়িবাঁধের করুণ অবস্থা। নিম্নচাপের আগে যদি কিছু মাটির কাজ করানো হতো তাহলে এ পানি ঢুকতে পারত না। বন্যা এলেই বেড়িবাঁধের কথা মনে পড়ে। বন্যার রেশ কেটে গেলে বেড়িবাঁধ বাঁধার কার্যক্রম থেমে যায়।
জানা গেছে, গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা সম্পূর্ণ পানির নিচে। পানপট্টি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০-১৫ ফুট অংশ ধসে পড়ে বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সতিরাম ও খরিদা গ্রামের বহু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রাম, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর এবং ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামসহ বহু এলাকা পানির নিচে। এসব অঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কৃষিজমিতে পানি ঢুকে পড়ায় ধান, ডাল, বাদামসহ নানা কৃষিপণ্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় হালিম মিয়া জানান, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আগুনমুখা চরের ৬০টি ঘর ও চর কারফারমা ৯০টি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ‘সক্রিয় মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছরে সর্বোচ্চ।’
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানাকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন