সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মেলা বাজার এলাকায় কপোতাক্ষ নদে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া বাজার সংযোগ পাকা রাস্তাটি ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন রোধে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কোনো কাজে আসেনি। ফলে সরকারের লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ের প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী দাবি, অতিসত্বর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদে মেলা বাজার এলাকার ভয়াবহ ভাঙনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আপৎকালীন জরুরি প্যাকেজ-১ এর আওতায় ভাঙন রোধে গাছ দিয়ে পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাট করার জন্য মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ কেশবপুর নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ লাখ টাকা কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পাইলিং ও মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তার সিংহভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আরও জানায়, ভাঙন থেকে পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আবারও আপৎকালীন জরুরি প্যকেজ-২ এ বালির বস্তার ডাম্পিংয়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজকে ২৭ লাখ টাকায় সাত হাজার দুইশটি বালির বস্তা ডাম্পিংয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, যার কাজ চলমান।
বুধবার (৩০ আগস্ট) কপোতাক্ষ নদের মেলাবাজার ভাঙনকবলিত এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা মেলেনি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো লোককে। ব্যবসায়ী কাশেম আলীসহ স্থানীয় লোকজন নদীর ওপারে বালুভর্তি বস্তাগুলো দেখিয়ে বলেন, কিছু বস্তায় বালি ভরাট করে রাখা হয়েছে। আর মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া সংযোগ রাস্তার মুখে বালি ও আরও কিছু বালিভর্তি বস্তা এবং মোড়ের একটি দোকানের ভেতর রাখা বস্তাগুলো দেখান। এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া সংযোগ রাস্তাটি নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পাইলিং ও মাটি ভরাটের জন্য সরকার ২৯ লাখ টাকা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের পাইলিং ও মাটি ভরাট করার কারণে সপ্তাহ না যেতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তাটি নদীতে চলে গেছে। তারা আরও বলেন, এখন শুনছি বালুর বস্তা দিয়ে নাকি ডাম্পিং করবে। সেখানে নাকি আরও ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এত টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরেও ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে কখন যে মন্দিরসহ ঘরবাড়ি নদীতে মিশে যায় সেই আশংকায় রয়েছেন তারাসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালির বস্তায় ১৭৫ কেজি বালি দেওয়ার কথা থাকলেও দিচ্ছে অনেক কম। কাজে এত অনিয়ম হলে এ কাজ কোনো উপকারে আসবে বলে মনে হয় না। সরকারের এত টাকা বরাদ্দের পরেও কাজের ধীরগতির ও নিম্নমানের পাইলিংয়ের কারণে রাস্তাটা চলে গেল নদীতে। এখন রাস্তার বাঁধ যেটুকু আছে দ্রুত ডাম্পিং করে রাস্তাটি সংস্কার না করা হলে বাকিটুকুও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল মতিন বলেন, আপৎকালীন জরুরি প্যকেজের-১ পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ করেছেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই পাইলিংসহ পাঁকা রাস্তাটি নদীতে ডেবে গেছে। এখন আপৎকালীন জরুরি প্যকেজের-২ এর মাধ্যমে ডাম্পিংয়ের কার্যাদেশ পেয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে ভাঙন এলাকায় ৫শ' বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। বালির বস্তা ভরাটের কাজ চলছে। আগামী ১৫ দিনের ভেতর বাকি বস্তাগুলো ফেলে ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিরুল ইসলাম জানান, তালা উপজেলার মেলাবাজারের সন্নিকটে কপোতাক্ষ নদের তীরে ভাঙন রোধে আপৎকালীন প্রকল্পের আওতায় ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে কাঠ বাঁশ দিয়ে প্ল্যাস্টিং করলেও সেটা টেকেনি। একই জায়গায় প্রকল্প-২ আওতায় ৭২০০ বালির বস্তা দিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
বস্তায় বালির পরিমাণ কমের বিয়য়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন বালির বস্তা ভরা হচ্ছে। এই কাজ শেষে আমরা ওজন করে নির্দেশনা দিলে সেলাই করে বাঁধ দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রকল্প মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুল ইসলাম এমপির প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জয় সরকার বলেন, আমাদের কমিটিতে রাখা হলেও কাজের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি ইস্টিমেটও দেওয়া হয়নি। শুধু একদিন বালির বস্তা গণনার জন্য ডাকা হয়েছিল।
মন্তব্য করুন