রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ‘ভয়ংকর’ প্রতারণার ফাঁদ

রংপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযানের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা
রংপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযানের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা

রংপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেন ‘ভয়ঙ্কর’ প্রতারণার এক ফাঁদ। সর্বশেষ রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় গত শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে স্বপ্ন জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতক মারা যায় বলে অভিযোগ ওঠে।

পরিবারের অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় সন্তানকে হারাতে হয়েছে তাদের। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা ঠেকাতে পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। তারা সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি প্রসূতির চিকিৎসা ব্যয় এবং নবজাতকের লাশ পরিবহনের গাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এ ঘটনার পর সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ওই হাসপাতালসহ আরও দুটি বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সেনাবাহিনী।

অভিযানে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভয়াবহ অনিয়ম ও প্রতারণার চিত্র সামনে এসেছে। নবজাতকের মৃত্যু, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল পরিচালনা, চিকিৎসক ও নার্স সংকট, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও রিএজেন্ট ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম উঠে আসে এ অভিযানে।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ ও ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৫২ ধারায় সাড়ে সাত লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে বিভিন্ন মেয়াদের জেল দেয়া হয়। একইসাথে তিনটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা ও ৭২ পদাতিক ডিভিশনের ৩০ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবু সাজ্জাদ। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার প্রত্যয় হাশেম।

অভিযানে নিবন্ধনবিহীন এসব ক্লিনিক ও হাসপাতাল বছরের পর বছর ধরে কীভাবে ভয়াবহ অনিয়ম ও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল স্বাস্থ্য বিভাগ ও সেনাবাহিনী তা দেখতে পায়।

এ সময় স্বপ্ন জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ সালে লাইসেন্স থাকলেও পরে আর তা নবায়ন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ শয্যার জন্য নিয়ম অনুযায়ী তিন শিফটে ৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও দায়িত্ব পালন করেন একজন। তবে কয়েক দিন থেকে তিনিও হাসপাতালে আসেননি।

আরও দেখা যায়, ডিএমএফ ডিগ্রিধারী একজন ডিউটি ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বেসরকারি এ হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত নার্সদের রেজিস্ট্রেশন নেই। অভিযানের সময় হাসপাতালটিতে পোস্ট অপারেটিভ রুম, লেবার রুম পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায় তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এক পর্যায়ে ওই হাসপাতালের পাশে উত্তরা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ হাসপাতালের অনিয়মের চিত্র প্রায় একই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লাইসেন্স থাকলেও পরের বছর নবায়নের জন্য আবেদন করেই পরিচালনা করা হচ্ছিল এ হাসপাতালের কার্যক্রম।

হাসপাতালটি আগে নিউ উত্তরা জেনারেল হাসপাতাল নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পরে নাম পরিবর্তন করে ফেলা হয়। শয্যা অনুযায়ী হাসপাতালটিতে ৩ শিফটে ৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও একজন চিকিৎসকও সেখানে নেই। এছাড়া হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রাংশে মরিচা, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নসহ নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি অভিযানে উঠে আসে।

নিউ রংপুর ক্লিনিক লাইসেন্স ছাড়াই গত ছয় বছর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। অভিযানের সময় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা ও হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাসিন্দা গৃহবধূ বিথী বেগম। রোববার (১৫ জুন) রাত ১২টার দিকে তার জরায়ু অপারেশন হয়। কিন্তু আজ দুপুর পর্যন্ত অপারেশন পরবর্তী সময়ে কোনো চিকিৎসককে তাকে দেখতে যাননি।

বিথী বেগমের স্বামী শামিম মিয়া জানান, রোববার রাতে তার স্ত্রীর অপারেশন হলেও দুপুর পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক পাননি তিনি। নার্সরাই সেবা দিচ্ছেন।

এছাড়া হেলথ এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযান শেষে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহিনা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত তদারকি করা হয়। অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

৭২ পদাতিক ডিভিশনের ৩০ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবু সাজ্জাদ বলেন, গত শুক্রবার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ ওঠে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, আজকে সেনাবাহিনী, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। চিকিৎসাসেবার নামে যারা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শেখ হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের তিন মামলায় বাদীদের সাক্ষ্য গ্রহণ

যতীন সরকার মারা গেছেন

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা নেই

জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে মুক্তির দোয়া

পাত্রীর ব্রেস্ট টিউমার অপারেশনের কথা বিয়ের আগে পাত্রকে জানাতে হবে?

চ্যাটজিপিটির ডায়েট চার্ট মেনে যেতে হলো হাসপাতালে

৬ ঘণ্টা পর ঢাকা-উত্তরাঞ্চল ট্রেন চলাচল শুরু

অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তার পানি

জীবনের শেষপ্রান্তে খোকা-খুকি, ভিক্ষা করে চলে সংসার

১০

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন

১১

ডিজনি ওয়ার্ল্ডে বাবা-ছেলের খুনসুটি

১২

প্রকৃতি থেকে শিখি শিরোনামে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের আয়োজন

১৩

ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস, বিতর্কে পাকিস্তানি অভিনেত্রী

১৪

পাথর লুট / ডিসি, এসপি ও বিভাগীয় কমিশনারকে দুষলেন জামায়াত নেতা

১৫

ফ্যান চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

১৬

নতুন নাটকে আইনা আসিফ

১৭

বাংলাদেশ এখন অর্থনীতিকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত : আমির খসরু

১৮

সিলেটের পাথর উদ্ধারে চলছে দুদকের অভিযান

১৯

ডিজিটাল ডিভাইস থেকে চোখ সরছে না, হতে পারে বিপদ

২০
X