শিপন ওরফে লাবণী এবং ওমর ফারুক দুই সহোদর ভাই। বড় ভাই শিপন একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে করেছেন বিয়ে, করেছেন প্রতারণা। আবার বড় ভাই শিপনের দেখানো পথেই হাঁটছে ছোট ভাই ওমর ফারুক। একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলাই তাদের যেন নেশা।
নওগাঁ ধামইরহাটে এমনই ঘটনার একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে। উপজেলার আড়াইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর (সরদারপাড়া) গ্রামের লোকমান হাকিমের দুই ছেলে ওমর ফারুক ও শিপনের বিরুদ্ধে একাধিক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে বিয়ে-প্রতারণা করারও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। কেউ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, কেউ সরলতার সুযোগ নিয়ে ফেলেন প্রেমের ফাঁদে।
এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বিচার-সালিশ, হয়েছে মামলা। তাই দুই ভাইয়ের জন্য অতিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা। তাদের জঘন্য পরিবার দাবি করে সমাজের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ বলে বিচার চান অনেকে।
ওমর ফারুকসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে করা নারী ও শিশু আইনের একটি মামলা সম্প্রতি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরই পাশের গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু নাবালিকা এক মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ওমর ফারুক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পত্নীতলা থানায় মামলা করলে পুলিশ ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আর অন্যান্য আসামি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন আগের মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার পর ওই মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওমর ফারুক বিয়ে করেছে।
এভাবেই কৃষক বাবার এই দুই ছেলের একের পর এক প্রেমের ফাঁদে ফেলা একপ্রকার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, তারা দুই ভাই মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো এবং একপর্যায়ে বিয়ে করে। এরপর কিছুদিন সংসার করার পর সম্পর্ক ছিন্ন করতো। এ নিয়ে তাদের নিয়ে একাধিকবার বিচার সালিশ করাও হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ফতেপুর বাজারের এক লন্ড্রি দোকানি জানালেন, আমার এই দোকানে বসে অনেক কিছু শোনা যায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি ক্ষিপ্ত স্থানীয়রা। তাদের বারবার প্রেম ও বিয়ে-প্রতারণা করাই যেন নেশা।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কালবেলার প্রতিবেদককে দেখে এলাকার ৬৪ বছরের এক মুদি দোকানি জানান, যে তথ্য নিতে এসেছেন তাতে কি তার বিচার হবে, নাকি এমনি তথ্য নিয়ে চলে যাবেন?
এরপর তিনি বলেন, ওমর ফারুকের নাম সুন্দর কিন্তু কাম খারাপ, কাম তার শয়তানের। বড় ছেলে শিপন গত প্রায় ৮ বছর থেকে ঢাকায় থাকলেও তার রয়েছে একাধিক কুকীর্তি। আর ছোট ছেলে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছিল। ওই মামলা শেষ হওয়ার তিন দিন পরই হিন্দু ওই মেয়েকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। বড় ভাই বগুড়ার একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনার পর বাড়িতে আর তুলবে না। পেটে বাচ্চা ছিল। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ বিচার করে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মেয়ের আর সংসার হলো না। আবার ঢাকায় আরেকটা বিয়ে করে। এছাড়া আরও মেয়ে পটানোর অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
মামলা করার কথা স্বীকার করলেন সাবেক এক পুলিশ সদস্য। একইভাবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাড়ির সঙ্গে তাদের বাড়ি। গ্রাম্য আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে আমার নাবালিকা মেয়েকে ভুলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। নিষেধ করার পরও শুনতো না ওমর ফারুক। বাধ্য হয়ে মামলা করেছিলাম ধামইরহাট থানায়। সেই মামলা দীর্ঘ আড়াই বছর চলার পর গত ১০ দিন আগে মামলাটি উঠিয়ে নেই। এরপর ওমর ফারুক আমার কাছে এসেছিল। তখন আমি ভালো করে চলার উপদেশ দেই। একদিন পর শুনতেছি, হিন্দু একটা মেয়েকে বের করে নিয়ে গেছে। তারা একটা জঘন্য পরিবার। এছাড়া ওমর ফারুক নেশাও করে।
তাদের বিচার না হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের দেখাদেখি এলাকার অন্যান্য ছেলে মেয়েও বিপথগামী হতে পারে। তাই এলাকাবাসী সবাই তাদের দুই ভাইয়ের বিচার চান।
দুই ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সরেজমিনে বাড়িতে গিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ওই দুই ভাইয়ের বিষয়ে এলাকার লোকজন যা বলেছে সঠিক বলেছে বলে দাবি করেন স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, তারা উচ্ছৃঙ্খল, তাই মান-সম্মানের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাই না। এর আগে এক পুলিশের মেয়েকে নিয়ে ওমর ফারুকের সঙ্গে অনেক ঝামেলা হয়ছিল। বড় ভাই শিপনেরও করা হয়েছিল বিচার-শালিস। তবে তার কৃষক বাবা তাদের কন্ট্রোল করতে পারে না।
মন্তব্য করুন