সিলেটে বিআইডব্লিউটিএর দুই কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৭ লাখ টাকায়। এভাবে সরকারি অর্থ লোকসানে স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
তবে, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী কালবেলাকে বলেন, টেন্ডারের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। টেন্ডারের বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ জানে। এটা তাদের বিষয়। মাঝে মাঝে ইজারাদারদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সমস্যা হলে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে বলে তিনি জানান।
নৌপথ বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ- ভৈরববাজার নদীবন্দর শাখার অধীন গোয়াইনঘাটের বাউরবাগ রানীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকি নদ, গোয়াইন নদী- পিয়াইন নদী ও চেঙ্গের খাল ঘাট প্রতিবছর ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। মেসার্স এস এল এন্টারপ্রাইজ ওই সময় ইজারা নেয়। আওয়ামী লীগ নেতা সুবাস দাস ও মুজিবুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তবে এবার কাজ পায় এস আর এন্টারপ্রাইজ। যেটির মালিক মনিরুল কবির নামে এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে উল্লিখিত নৌপথের ইজারামূল্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগাভাগি করে খেয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নতুন একটি সিন্ডিকেট এটি ভাগাভাগি করে খাওয়া শুরু করে। কিন্তু দুই বছর পর ইজারা মূল্য বৃদ্ধি না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অদৃশ্য আঁতাতে ৫৭ লাখ টাকায় ইজারা ছিনিয়ে নিয়েছে মনিরুল কবির।
এতে সরকারের লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ঠিকাদারদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আমলেই এখানে প্রায় দুই কোটি টাকার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এরপর কয়েক বছর টেন্ডার না দিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন ভাগাভাগি করে খেতেন। কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পরও একটি গ্রুপ নতুন করে খাওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা স্বৈরাচারের আমলেও সুবিধাভোগী ছিলেন। ২ কোটি টাকার টেন্ডার এখন অন্তত তিন কোটি টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সেটি লুটপাটের উদ্দেশ্যে মাত্র ৫৭ লাখ টাকায় করা হয়েছে।
জানা যায়, তৎকালীন সময় করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউনে নৌপথ বন্ধ থাকে। পরে একটি সেতু রক্ষায় নৌচলাচল বন্ধের ঘোষণায় দুই কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়ে ইজারার টাকা ফেরত চেয়েছিল ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। এরপর ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএল এন্টারপ্রাইজ ক্ষতি হওয়ার দোহাই দিয়ে বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনা টেন্ডারে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইজারা ছাড়া খাস আদায় করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বন্দর বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাট, পয়েন্ট ও খাল টোল স্টেশনগুলোর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ইজারা দেওয়া হয়। গত এপ্রিলে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. শরিফুলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
মন্তব্য করুন