বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইছামারা ফকিরপাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। হুমকিতে রয়েছে আরও কয়েক কিলোমিটার এলাকা।
কামালপুরে নদী ভাঙনের ফলে হুমকিতে আছে মুল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। দড়িপাড়া থেকে হাসনাপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার। এখনও পানি বিপৎসীমার ১৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এবং পাহাড়ি ঢল এলে বিপৎসীমা ছুঁতে সময় লাগবে না বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
বাঁধ রক্ষায় প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, আপৎকালীন সময়ে কিছু বাঁধে জরুরি কাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এ জন্য মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের মানিকদাইড় এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা নদীভাঙন রোধে চলমান ব্যবস্থাগুলো পর্যালোচনা করেন। তিনি নির্দেশনা দেন, যেসব পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে আছে, সেখানে যেন দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়। একইসঙ্গে এলাকার মানুষকে নদীভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, যমুনার মানিকদাইড় অংশে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ। জেলা প্রশাসক এ দাবিকে অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে জানান, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত আবেদন পাঠানো হবে। তার এ ঘোষণা চরাঞ্চলবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন, সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান, বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির এবং সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন শাখা-১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষায় যমুনা নদীর মানিকদাইড় অংশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবিতে সোমবার (০৭ জুলাই) যমুনা নদীভাঙন প্রতিরোধ ও বেড়িবাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। সে সময় জেলা প্রশাসক তাদের সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন