চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ধস নেমেছে। এবার পাসের হার ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১ সাল থেকে বোর্ডটিতে যেখানে প্রায় ধারাবাহিকভাবে ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করছিল, সেখানে এবার প্রায় ১১ শতাংশ কমেছে। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে গণিত ও ইংরেজি বিষয়। এই দুটি বিষয়ে পাসের হার গড়ে ৮২ শতাংশের মতো।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গত পাঁচ বছরের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। এরপর ২০২২ সালে তা কিছুটা কমে হয় ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে আরও কমে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশে নামলেও ২০২৪ সালে আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশে। কিন্তু ২০২৫ সালে হঠাৎ করেই পাসের হার কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশে, যা বোর্ডটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল।
এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন। অকৃতকার্যদের মধ্যে ২৪ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী এক বিষয়ে এবং বাকিরা একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে। পরীক্ষাকালীন সময়ে মাত্র একজন শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে।
যদিও পাসের হার কমেছে, কিন্তু এ বছর জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৮২৩ জন, আর ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৯৩৭। এর আগের বছরগুলোতেও এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি।
ছাত্রীদের ফল এ বছরও ছেলেদের তুলনায় সামান্য ভালো হয়েছে। ছাত্রীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যেও ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশি—মোট ৬ হাজার ৩৫৩ জন। ছেলেদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯০ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ হাজার ১৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৩৩টি স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একটি স্কুলের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি।
এ বছর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন।
চট্টগ্রাম নগরীর পাসের হার ৮১ দশমিক ০৩ শতাংশ, আর নগরীর বাইরে জেলার পাসের হার ৭১ দশমিক ২৯ শতাংশ। পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬০ দশমিক ৭৭ এবং বান্দরবানে ৬৩ দশমিক ১২ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক ফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি—৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৩ দশমিক ৫৪ এবং মানবিক বিভাগে ৫৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
গণিত ও ইংরেজিতে ভরাডুবিই ফল বিপর্যয়ের কারণ:
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে গণিত আর ইংরেজিতে ভরাডুবি বড় কারণ। এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গণিতে পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মূলত এই দুই বিষয়ে অকৃতকার্য বেশি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, এবারের ফল মূল্যায়নে আমরা ছিলাম বিশেষভাবে সতর্ক। পরীক্ষকদের আগেভাগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল—রুব্রিকস অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে, অর্থাৎ কোন উত্তরের জন্য কত নম্বর বরাদ্দ তা যেন নির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করা হয়। এতে করে ওভার মার্কিং বা আনডার মার্কিংয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। যথাযথভাবে নম্বর প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে মূল্যায়নও হয়েছে সঠিক ও নিরপেক্ষ।
মন্তব্য করুন