‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’, বাক্যটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু ‘কারাগার’ শব্দটি ভালোভাবে নেয় না অনেকে। বন্দি মানেই ‘খারাপ’ মানুষ, এমনটিও ভেবে থাকেন অনেকে। তবে এটি যে একটি ‘সুশৃঙ্খল’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে তার সঠিক প্রমাণ দিয়েছেন পঞ্চগড় জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ ও জেলা কারাগারের জেলার মো. আখেরুল ইসলাম। তাদের উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিক মনোভাব এবং নেতৃত্বে পঞ্চগড় কারাগার আজ এক নতুন আদর্শে রূপ নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কারা প্রাচীরের আড়ালে ফুটে উঠেছে সম্পর্কের ফুল। বন্দি, কারা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে অংশ নিচ্ছেন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। কারা মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আয়োজন করা হচ্ছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে বন্দিদের মাঝে তৈরি হয়েছে আত্মবিশ্বাস, আবেগ আর আনন্দে ভরপুর এক নতুন পৃথিবী।
সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ‘গণশুনানি’ কার্যক্রমের মাধ্যমে জেল সুপার বা কারাগারের জেলার নিজে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। শোনেন তাদের সমস্যা। দেন তাৎক্ষণিক সমাধান।
বন্দিদের পরিবারের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এভাবে কখনো কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি ৫ দিনব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে এ উদ্যোগ কারা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাইরের এলাকাতেও। এতে বন্দিদের মধ্যে সমাজের জন্য কিছু করার মানসিকতা তৈরি হয়, যা শুদ্ধির পথে এক অনন্য পদক্ষেপ।
কারাগারের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিনি চা-বাগান। ছোট হলেও এর প্রতীকী মূল্য অনেক বড়। এটি কেবল পরিবেশবান্ধব প্রকল্প নয়, বরং বন্দিদের মননে সৃষ্টিশীলতা আর শেকড়ের টান তৈরি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৌসুমি ফল উৎসব, মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা প্রেরণাদায়ক আয়োজন।
এ বিষয়ে জেলার মো. আখেরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দিদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভবিষ্যতে আরবি শিক্ষা, অক্ষরজ্ঞান, আত্মউন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা চাই, একজন বন্দি এখান থেকে ফিরে যাক একজন ভালো মানুষ হয়ে, সমাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে।’
আখেরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলা কারাগার আজ প্রমাণ করে দিয়েছে কারাগার মানেই শাস্তি নয়, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, সহানুভূতি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা হয়ে উঠতে পারে শুদ্ধি ও সম্ভাবনার স্থান। এখানকার বদলে যাওয়া চিত্র আমাদের শেখায়, মানুষ পরিবর্তন হতে পারে শুধু প্রয়োজন, একটু হাত বাড়িয়ে দেওয়া, ভালোবাসা, আর একটা সুযোগের মাধ্যমে।’
মন্তব্য করুন