সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে ‘হাফ প্যান্ট পরে প্রবেশে নিষেধ’ সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে মাজার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি মাজার এলাকায় এ সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
শাহজালাল (রহ.) মাজারের মোতাওয়াল্লি সরেকওম ফতেহ উল্লাহ আল আমান কালবেলাকে বলেন, সারা বছরই শাহজালালের মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সিলেটে এলে একবার হলেও ঘুরে যান শাহজালালের মাজার। ইদানীং অনেক পর্যটক হাফ প্যান্ট পরে মাজারে আসছেন। এতে মাজারের আদব ও পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। তাই মাজার এলাকায় হাফ প্যান্ট পরে না ঢুকতে নিষেধাজ্ঞামূলক সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের প্রবেশের মূল ফটক ও পেছনের প্রবেশমুখে কয়েকটি সাইনবোর্ড টানানো। এতে লেখা ‘হাফ প্যান্ট পরে মাজারের গেটের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল করিম কিম বলেন, সিলেট ঘুরতে আসা পর্যটকদের অনেকেই মাজারের পবিত্রতার বিষয়টি মাথায় না রেখে খেয়ালখুশি মতো পোশাক পরে ঘুরাফেরা করেন। যা সিলেটবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলছিল। এ অবস্থায় মাজার কর্তৃপক্ষের এ নোটিশ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
তবে মাজার কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এমন সাইনবোর্ড টানানো ঠিক হয়নি। এ স্থানকে শুধু মাজার হিসেবে দেখলে হবে না। এটি সিলেটের একটি দর্শনীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান। অনেক মত ও আদর্শের মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। এমনকি মুসলিম ছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষও আসেন ঘুরতে। এ অবস্থায় এমন সাইনবোর্ড টানানো পর্যটকদের আনাগোনা কমিয়ে দিতে পারে।
সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের শাসনকাল ১৩০৩ সালে হজরত শাহজালালের হাতে বিজিত হয় সিলেট অঞ্চল। ১৩৪০ সালে হজরত শাহজালাল মৃত্যুবরণ করলে তাকে সিলেট শহরের দরগাহ এলাকায় সমাহিত করা হয়। বর্তমানে মাজার এলাকায় শত শত জালালি কবুতর, পুকুরভর্তি গজার মাছ ছাড়াও শাহজালালের ব্যবহৃত তলোয়ার রক্ষিত আছে।
যা রয়েছে মাজার চত্বরে
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এসব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ দর্শন ও জিয়ারত। প্রতি শুক্রবার লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে দরগাহ এলাকা। বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের এতটাই ভিড় হয়, মসজিদ আঙিনা ছাড়িয়ে নামাজের কাতার বসে মূল সড়ক পর্যন্ত। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মাজার জিয়ারত করেন। দরগাহের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ছোট ঝরনা। এক সময় এ ঝরনায় সোনালি কই মাছ, মাগুর মাছ দেখা যেত। মক্কার পবিত্র জমজম কূপের সঙ্গে এ ঝরনার সংযোগ আছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
দরগাহের আঙিনায় জালালি কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য ছড়িয়ে রাখা হয় ধান। তা দেখতে সেখানে ভিড় করেন আগতরা। কথিত আছে, হজরত শাহজালালের (রহ.) সময় থেকে এসব কবুতর দরগাহ এলাকায় রয়েছে। তাই এগুলো ‘জালালি কবুতর’ নামে পরিচিত।
একতলা ঘরের ভেতর বড় বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, এসব ডেকচির প্রত্যেকটিতে সাতটি গরুর মাংস ও সাত মণ চাল একসঙ্গে রান্না করা যায়। ডেকচিগুলোও মনোযোগ দিয়ে দেখেন ভক্তরা। অনেকে আবার এখানে মানত হিসাবে টাকা-পয়সা দান করেন।
শাহজালালের মাজার চত্বরের উত্তর দিকে পাথর বাঁধানো পুকুর ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে সবসময়। এ পুকুরে বড় বড় গজার মাছ রয়েছে। যেগুলো হজরত শাহজালালের (রহ.) জীবদ্দশা থেকেই মাজার প্রাঙ্গণের পুকুরটিতে আছে বলে ভক্তদের বিশ্বাস। এ গজার মাছ মারা গেলে দরগাহ এলাকায় এগুলোকে কবর দেওয়া হয়।
শাহজালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চামড়া দিয়ে নির্মিত নামাজের মোসল্লা, তামার নির্মিত প্লেট এবং বাটি।
মন্তব্য করুন