মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পৌরসভা নয়, যেন ময়লার ভাগাড়

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভাজুড়েই ময়লার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ছবি : কালবেলা
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভাজুড়েই ময়লার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ছবি : কালবেলা

সময়ের ব্যবধানে মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি খাতাকলমে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হয়েছে। কিন্তু পৌরবাসীর ভাগ্য থেকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের একটুও পরিবর্তন হয়নি। পৌরসভার বাতাসজুড়ে দুর্গন্ধ আর পুরো পৌরসভাই যেন মশার নিরাপদ আবাসস্থল।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার এলাকায় হঠাৎ কোনো অপরিচিত লোক ঢুকে পড়লে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এটা কোনো মানুষের বাসস্থান। মনে হবে যেন, অন্য কোনো এলাকার ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং স্থান। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমগ্র পৌরসভাজুড়েই ময়লার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পৌরসভার সব খাল, সরকারি খাস জমি, পুকুর, ড্রেন প্রায় সবই ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সব এলাকার সামনেই ময়লার স্তূপ।

পৌরসভার প্রায় ৮৮ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাত্র ৩ জন। ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫৭টি স্থানে রয়েছে ময়লার স্তূপ। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে পৌরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ। ময়লা পরিষ্কার করার গাড়ি পর্যাপ্ত থাকলেও সেগুলো ব্যবহার না করার কারণে পৌরভবনের কম্পাইন্ডেই নষ্ট হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের লোক সামান্য কিছু নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ময়লা আনতে যায় সপ্তাহে এক দিন। সরকার পরিবর্তনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসী মনোভাব আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে আরও বেশি হযবরল সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার কাঞ্জর ভেন্সী ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

কয়েক মাস ধরে এলাকার মোড়ে মোড়ে প্লাস্টিকের বিন (ময়লা ফেলার বক্স) দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু যেগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার করা হয় না বিধায় আরও বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়। বেশিরভাগ এলাকায় ময়লাভর্তি প্লাস্টিকের বিন দিনের পর দিন পড়ে থাকে, পচে গিয়ে আরও বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়। বৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে আর দুর্গন্ধ বাড়ে দ্বিগুণ। অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত ময়লা-আবর্জনার কারণে পৌরসভা বসবাসের অযোগ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে। আবার পরিবেশ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পৌরবাসীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ। তা ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় ময়লা পানির জলাবদ্ধতা। রাতের বেলায় ময়লা-আবর্জনার গন্ধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মিরকাদিম পৌরবাসীর প্রধান সমস্যাই এখন ময়লা-আবর্জনা।

এ বিষয়ে রিকাবী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানান, এলাকাবাসীর সব ময়লা আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের এনে ফেলে। এগুলো ২৪ ঘণ্টাই দুর্গন্ধ ছড়ায়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো এগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করে না।

উওর রাম গোপালপুরের বাসিন্দা আরিফ জানান, প্রতি বছর আমরা শুধু ট্যাক্স পরিশোধ করি কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না। ময়লার জন্য প্লাস্টিকের বিন দেওয়া হয়েছে। এগুলো ময়লায় ভরে থাকে। পৌরসভার লোক সপ্তাহে এক দিন ময়লা নিতে আসে। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই ময়লা রাস্তায় ফেলে। পৌরবাসী ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। কিছুদিন পরে এলাকায় কোনো মানুষই আর সুস্থ থাকবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, কয়েক মাস আগে ময়লা নিতে বাড়ির দরজায় আসত আবার ময়লা নেওয়ার জন্য মাসে একশ করে টাকা নিত। এখন আর ময়লা নিতে আসে না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে ফেলতে হয়।

চিকিৎসক আল রাব্বানী বলেন, এই পৌরসভার যে অবস্থা দেখলাম, তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ডেঙ্গু ও মশাবাহী রোগে আক্রান্ত ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ। তা ছাড়া পৌরবাসীর শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গণস্বাস্থ্য রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পৌরসভার কাঞ্জর ভেন্সী ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীও মজুরি মাত্র ৫০০ টাকা। এ মজুরিতে লোক পাওয়া যায় না। তাই কয়েক দিন আগে একটি এনজিওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন এনজিও এর ১৫ জন লোক কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে লোক বাড়ানো হবে।

এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. কে. এম. বজলুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, আমরা লোক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা আনবে। এজন্য পরিবার প্রতি তাদের একটা নির্দিষ্ট ফ্রি পরিশোধ করতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা আনা শুরু হলে ধীরে ধীরে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদেরের পদ স্থগিত

লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে তিস্তার পানি

বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ছারছীনা পীরকে তারেক রহমানের ‘সালাম’

ড্যাবের ৮ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বিএনপির

বাংলাদেশে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে হানডা

পুলিশের ১১ কর্মকর্তাকে বদলি

বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া

সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য, আছে শর্ত

সত্য বললে আর মামলা-নির্যাতন হবে না : আমিনুল হক

১০

খুলনার ভিডিও নিয়ে শ্যামনগরে চিকিৎসকদের নামে অপপ্রচারের অভিযোগ

১১

মিরসরাইয়ে বিএনপি-যুবদলের শীর্ষ পাঁচ নেতা বহিষ্কার

১২

ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী-ভোটাররা যা করতে পারবেন, যা পারবেন না

১৩

বিসিসিআই অফিসে ৮ লাখ টাকার জার্সি চুরি, গার্ড গ্রেপ্তার

১৪

‘জুলাই সনদ’ ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির

১৫

মসজিদের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ চেয়ে ইউএনওর কাছে ছাত্রদল নেতার আবেদন

১৬

যে শহরে থাকলেই মিলবে ৬০ লাখ টাকা, শুধু থাকতে হবে সেখানে

১৭

আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখতে এনসিপি নেতাদের প্রতি আহ্বান প্রিন্সের

১৮

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি

১৯

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, আতঙ্কে এলাকাবাসী

২০
X