ফেনীর মহিপালে বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম (২৫) হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
এতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ২২১ আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফেনী সদর আমলি আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এটি ফেনীতে বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় প্রথম চার্জশিট।
এ নিয়ে এদিন দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, মূলত পুলিশের বিভিন্ন তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সর্বস্তরে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এখানে কে কোন রাজনৈতিক দলের তা বিবেচনা করা হয়নি। উক্ত মামলায় ১৫৬ জন এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ৬৫ জনসহ মোট ২২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া ফেনীতে বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারনামীয় ও আরও ৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় ১২ জন ও সন্দেহভাজন ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুরাদ হাসান বাবুসহ তিন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে আদালতে ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। মামলায় বিগত ৪ আগস্ট মহিপালে মাসুম হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার বাদী ও নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা কালবেলাকে জানান, আমরা শুনেছি এ বিষয়ে পুলিশ একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে নথি পর্যালোচনা করে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ আগস্ট মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিহত মাসুম সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের তরাব পাটোয়ারী বাড়ির মৃত মাওলানা নোমান হাসানের ছেলে। এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ১৬২ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মন্তব্য করুন