আদর শর্মা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনী

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনীর জন্য সাজানো হচ্ছে মঞ্চ। ছবি : কালবেলা
রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনীর জন্য সাজানো হচ্ছে মঞ্চ। ছবি : কালবেলা

ঢাকের শেষ আওয়াজ মিলিয়ে গেছে দুদিন আগেই। তবু পুকুরের জলে ভেসে বেড়ায় সেই সুরের প্রতিধ্বনি। কচুরিপানায় ঢেকে যাওয়া পুকুরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক কাঠের মঞ্চ। বৃষ্টিতে নীল ত্রিপল খানিকটা উড়ে গেছে, কিন্তু আলো-আঁধারিতে সেটিই যেন উৎসবের এক নতুন প্রতীক।

শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারদিক। বাতাসে ধূপের গন্ধ, মঞ্চের চারপাশে তরুণদের ব্যস্ততা। কারও হাতে মাইক, কারও হাতে সাজসজ্জার তার। দেবী গেছেন, কিন্তু পূজার মায়া এখনো কাটেনি। বরং উৎসবের গল্প এগিয়ে চলেছে নতুন অধ্যায়ে। এই দৃশ্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ পাহাড়তলীর আমান বাজার এলাকার রেবতী মহাজন বাড়ির।

এখানেই শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে বসেছে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘বিজয়া সম্মিলনী’।

এর আয়োজক ‘পরিবর্তন সার্বজনীন দূর্গাপূজা উদযাপন পরিষদ’, আর মঞ্চে গান পরিবেশন করে বাংলাদেশের প্রথম সনাতনী রক ব্যান্ড ‘প্রণাম’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ সৈয়দ নেছার উদ্দিন বুলু। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত।

পরিবর্তন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জে এস জিশুর ভাষায়, এটি কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং উৎসব-পরবর্তী পুনর্মিলনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্ব, আনন্দ ও সংস্কৃতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার প্রয়াস।

শতবর্ষের অন্ধকার ভাঙার গল্প: রেবতী মহাজন বাড়ি চট্টগ্রামের সনাতনী ইতিহাসে এক বিশেষ নাম। ব্রিটিশ আমল থেকে এই বাড়িতে কখনো হয়নি দুর্গাপূজা। অথচ দেড় শতাধিক সনাতনী পরিবারের বসবাস এখানে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐক্যে পিছিয়ে থাকা এই এলাকায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সম্পর্ক ভেঙেছে বারবার। বিভাজনে ডুবে থাকা মানুষ একসময় বিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছিল এখানে কখনো পূজা হতে পারে না।

এই অন্ধকার ভাঙতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় তরুণ আয়ান শর্মা। তিনি স্থানীয় দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি এবং পরিবর্তন সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

মাত্র ১৮ জন বাড়ির মানুষকে নিয়ে ২০১৩ সালে গড়ে তোলেন সংগঠনটি। স্লোগান ছিল, ‘ইতিবাচক পরিবর্তনের অঙ্গীকার’। দরিদ্র পরিবারের কন্যার বিয়ের সহায়তা, অসহায়দের পাশে থাকা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি— এভাবেই ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে অবিশ্বাসের দেয়াল।

আয়ান শর্মা বলেন, আমি সবসময়ই ভেবেছি পরিবর্তন আসবে ভেতর থেকে। আমরা যদি নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে এক হই, তবে অসম্ভব কিছু নেই। পূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়; এটি সংস্কৃতি, ঐক্য আর আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাতানো জালে আটকা নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ

ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় না : মুশফিকুর রহমান

সিলেটে যানজট মোকাবিলায় এনসিপির ২৭ প্রস্তাবনা

একমাস পর খুলছে বাকৃবি, সেশনজটের শঙ্কা

মানুষের কাছে জাগপার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে : রাশেদ প্রধান 

গাজীপুরে রাতের আঁধারে সড়কে ঝরল ৩ প্রাণ

তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুর গুঞ্জন

আ. লীগের সহসম্পাদক ব্যারিস্টার হাবিব গ্রেপ্তার

এক টাকারও অভিযোগ দিতে পারলে রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিব : সারজিস

ঢাকা মহানগর আদালতে পরিচ্ছনতা অভিযান

১০

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারীসহ ফার্মাসিস্ট আটক

১১

৮ দিন পর খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

১২

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে মারধর

১৩

মাউন্ট-সেশকোর গোলে ম্যানইউর স্বস্তির জয়

১৪

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ গ্রেপ্তার

১৫

‘শহিদুল আলম ও গাজার পাশে আছি-থাকব’

১৬

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনী

১৭

জামায়াত ধর্মের জন্য ক্ষতিকর : আমিনুল হক

১৮

এভারেস্ট বেজ ক‍্যাম্প সামিট ৮ বাংলাদেশির

১৯

তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা : আবু বকর সিদ্দিক

২০
X