স্ত্রী সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালান আসাদ আলী (৫৫)। প্রতিবেশীদের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। যা আয় হয় তাতে সংসার চলে না। মাঝে মধ্যে দিনমজুরের কাজও করেন। দুই বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে অভাবে পড়ে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ১০ কাঠা জমি বন্ধক রেখেছিলেন।
দুই বছরে ২০ হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। আসল ৩০ হাজার শোধ দিয়েছেন। এ বছর টাকা দিতে না পারায় দিনমজুর আসাদ আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ। আজিজের বাড়িতে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় আসাদ আলীকে।
প্রায় ৩৬ ঘণ্টা শিকলবন্দি থাকার পর রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে দিনমজুর আসাদ আলীকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুদ ব্যবসায়ী আজিজের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় আজিজ ও তার বড় ভাই মাজেদুল এবং বাবা আফজাল প্রামাণিককে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন আসাদের স্ত্রী শাহানারা বেগম।
হযরত আলীর ছেলে কৃষক আসাদ আলীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বেরপুর গ্রামে। শনিবার সকালে সেখান থেকেই আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে শিকলে বেঁধে রাখা আসাদকে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসামি আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার কৃষক আসাদ জানান, বছর দুয়েক আগে জমি বন্ধক রেখে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। এ বছর ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারেননি তিনি। শনিবার বিকেলে সুদ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দিনমজুর আসাদ আলীকে কোমরে শিকল পেঁচিয়ে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বারান্দার এক খুঁটির সঙ্গে। টাকা দিতে না পারলে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন আজিজ।
ভুক্তভোগী কৃষকের স্ত্রী শাহানারা বেগম জানান, শনিবার সকালে তার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে বাড়িতে এসে সুদের কারবারি আব্দুল আজিজ ও তার লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘুমন্ত স্বামীকে বিছানা থেকে জোরপূর্বক তুলে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। সে সময় টাকার দাবিও করেন। টাকা দিতে না পারায় স্বামীকে চোখের সামনেই টানাহ্যাঁচড়া করে আব্দুল আজিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ জানান, দুই বছর আগে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন আসাদ। বারবার তাগিদ দিলেও টাকা পরিশোধ করেননি। এ কারণে বাড়ি থেকে আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, অভিযুক্ত আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন