শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ অঞ্চলে জমে উঠেছে রোপা আমন ধানের চারা বীজ বিক্রির হাট-বাজার। যদিও চলতি বছরে স্বল্প বন্যা, আবাদের মৌসুমে প্রয়োজনের তুলুনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিল এলাকায় রোপা আমন আবাদে কৃষক খানিকটা ছন্দপতন ঘটে। তারপরও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত মাঝারি বর্ষণে রোপা আমন আবাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বিল এলাকায়। ইতোমধ্যে শত শত কৃষক রোপা ধানের জমি তৈরি করে ধান লাগাতে শুরু করেছে।
বর্তমানে রোপা আমন চাষে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর প্রায় এক যোগে এলাকায় রোপা আমন আবাদ শুরু হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে রোপা আমন ধানের চারা বীজের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি স্বাভাবিক বন্যা না হওয়ায় বিলের অনেক নিচু জমিতেও কৃষক এ বছর রোপা আমন আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই চলনবিল এলাকায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১২টি হাট-বাজারে রোপা আমনের চারা বীজ বিক্রি ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে। এসব হাট-বাজারে, স্থানীয় জাতের আব্দুল গুটি, কাটারি ভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫৮, ব্রি-৩৪ ও ব্রি-৩৬ জাতের রোপা আমনের চারা বীজ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তালম, বারুহাঁস, নওগাঁ, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর, দেশিগ্রাম ও তাড়াশ পৌর এলাকায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গত ২০২২ সালের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টর বেশি। এ কারণে আবাদের মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমন করতে গিয়ে এলাকার কৃষকদের মাঝে চারা বীজের চাহিদাও রয়েছে। আর চারা বীজের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চলনবিলের চারা বীজ বিক্রি হয় এমন হাট-বাজারের পাশাপাশি যেসব কৃষকের জমিতে উদ্ধৃত্ত চারা বীজ রয়েছে সেখান থেকে কৃষককেরা তা সংগ্রহ করতে চলে যাচ্ছেন।
উপজেলার বিনসাড়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম জানান, এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে এক পণ থেকে সোয়া পণ (৮০ আঁটিতে এক পণ) চারা বীজ প্রয়োজন হয়। তার বাজার মূল্য বর্তমানে প্রকার ভেদে সাড়ে ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
কৃষকরা আরও জানান, আবাদের শুরুতে এক পণ থেকে সোয়া পণ চারা বীজ কিনতে বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি টাকা লাগলেও এখন চারার দাম বেশ কমে গেছে। যা কৃষকদের নাগালের মধ্যেই আছে এতেই খুশি।
বারুহাস ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের আরেক কৃষক শোভন চন্দ্র জানান, গত ভাদ্র মাসের শেষে চলনবিল অঞ্চলের অনেক এলাকার নিচু জমি থেকে পানি নেমে যায়। তাই অনেক কৃষক জমি পতিত (জমি ফাঁকা না রাখা) বা ফেলে না রেখে দেরিতে হলেও জমিতে রোপা আমনের চারা বীজ লাগাচ্ছেন। এতে শেষ সময়েও চারার চাহিদা একটু বেশিই বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, একটু দেরিতে হলেও চলনবিল অঞ্চলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হচ্ছে। আর তেল, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা, পর্যাপ্ত রাসায়নিক সারের সহজলভ্যতার কারণে কৃষক এ আবাদে অধিক মনোযোগ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলনবিল এলাকা থেকে চলতি বছর পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে।