ফুলগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০২:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফেনীতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ

গরু দিয়ে হাল চাষ করছেন কৃষক। ছবি : কালবেলা
গরু দিয়ে হাল চাষ করছেন কৃষক। ছবি : কালবেলা

কালের বিবর্তনে ও ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে ঘরে বসে অনেক সহজেই মানুষ পাচ্ছে নানান সুযোগ-সুবিধা। সেই অগ্রযাত্রায় থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। দিন দিন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির চিরচেনা সেই গরুর কাঁধে জোয়াল লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় এক সময় গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়ত। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেতো শত শত কৃষক বাঁশের ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেধে দিয়ে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেত না। অথচ গরু-লাঙলের সঙ্গে কৃষকের সেই মিতালীর দৃশ্য এখন বিরল। যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কৃষক এখন তার সুবিধামতো দিনের যেকোনো সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে সত্য। কিন্তু ফসলের গুণগতমান এবং স্বাদ কমে গেছে এবং জমির উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে।

প্রবীণ কৃষক আবদুল হাই জানান, একসময় ফুলগাজী উপজেলায় প্রতিটি গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঘরে ঘরে ছিল গরুর লালনপালন। এই গরুগুলো যেন পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে আমরা একরের পর একর ভূমি চাষ করতাম। যাদের গরু কিংবা হাল ছিল না তারা জমি চাষের জন্য ‘মাগনে কামলা দিতাম’ এর বিনিময়ে তার গরু নিয়ে জমি চাষ করতো অনেকেই। এছাড়াও হাল মালিকেরা সময়মতো জমি চাষ করে দিত। এতে করে চাষের মৌসুমে তাদের উপরি আয়ের ব্যবস্থা হতো। এ কৃষক একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন এখন আর কেউ গরু দিয়ে হাল চাষ করে না আমাদের বাপ-দাদাদের ঐতিহ্য গ্রাম অঞ্চল থেকে একদম বিলীন হওয়ার পথে।

এ বিষয়ে উপজেলার বেশ কয়েকজন প্রবীণ কৃষক জানায়, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। এ পদ্ধতির চাষ সার ও কীটনাশকের জন্য সাশ্রয় হয়। কষ্ট হলেও আমাদের গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগত। বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম হয়তো বই পড়ে জানতে পারবে এক সময় গ্রাম অঞ্চলে গরু দিয়ে হাল চাষের বিষয়টি।

উপলজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গরু দিয়ে হাল চাষ করালে জমিনে ব্যবহার করা সার এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে মেশে। যার ফলে জমিনের উর্বরতা বাড়ে। তবে এ পদ্ধতিতে হাল চাষে অধিক সময় ব্যয় করতে হয় কৃষকদের। বর্তমান সময়ে হাল চাষের জন্য আধুনিক ট্রাক্টরের আবিষ্কার হওয়ায় অল্প সময়ে কৃষকরা তাদের জমিন চাষ করতে পারে। যার কারনে পুরনো পদ্ধতিতে গরু দিয়ে হাল চাষ এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারীদের ৫ প্রতিশ্রুতি দিলেন তারেক রহমান

পাসপোর্ট জালিয়াতি, যে শাস্তি পেলেন সহকারী প্রোগ্রামার

তারেক রহমানের জন্মদিনে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল-অগ্নিসংযোগ, ঢাবি শিক্ষক মোনামির প্রশ্ন

ঢাকার খাবারের ঝালে মজেছেন ইরানি ফাকরি

শেখ হাসিনা-কামালকে ফেরাতে সরকারের নতুন কৌশল

পুনরায় দুঃসংবাদ পেলেন বিএনপির এক নেতা

সেই বিচারকের মোবাইল ফোন ও চশমা উদ্ধার

তারেক রহমানের জন্মদিনে শীতবস্ত্র বিতরণ

১০

নিউমুরিং টার্মিনালের চুক্তির সব কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ

১১

সিলেটের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না শুক্রবার 

১২

আ.লীগের ৫ শতাধিক সমর্থকের নামে চার মামলা, গ্রেপ্তার ২২

১৩

নির্বাচনের আগে ইসির ৯ কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন

১৪

স্ত্রী হারালেন তোফায়েল আহমেদ

১৫

রাতে ৫৬ নেতাকে সুখবর দিল বিএনপি

১৬

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে গ্রেনেড, বাড়িতে নিয়ে যান কৃষক

১৭

ইতালি যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের দুই যুবকের মৃত্যু

১৮

জিম্বাবুয়ের কাছে লঙ্কানদের লজ্জার পরাজয়

১৯

প্রথমবারের মতো কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে পাকিস্তান

২০
X