মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আসন্ন। দিনটিকে ঘিরে উৎসব মুখর পরিবেশে জামালপুরে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। পাশাপাশি কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির জন্য বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র তৈরিসহ পুরাতন অস্ত্র শান-ধার দিতেও অনেকে ছুটছেন কামারপাড়ায়।
ঈদকে কেন্দ্র করে সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা হাটবাড়ী ও আওনা ইউনিয়নের কাবারিয়াবাড়ী কামারপাড়া এলাকায় কামারদের লোহা পেটানো টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন বাড়ছে কামারদের কর্মব্যস্ততা। তাই শেষ সময়টুকু দিনভর সমান তালে চলছে তাদের দা, বটি, ছুরি কাটারি ও কুড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরি ও শান দেওয়ার কাজ।
এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটগুলোতেও কেনা-বেচায় কামারদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। কামারদের মধ্যে কেউ দগদগে আগুনে লোহা গরম করছেন, কেউ বা সেই লোহাকে পিটিয়ে বিভিন্ন আকার দিচ্ছেন। আবার কেউ বা তৈরি হওয়া জিনিসে ধারালো করছেন। এ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ কামারির কাছ থেকে অনেকেই পুরাতন দা, বটি, ছুরি ও কাটারিসহ বিভিন্ন ধরনের পুরাতন অস্ত্র ধার করে নিচ্ছেন।
কাবারিয়াবাড়ীর কামার গোপাল চন্দ্র কর্মকার জানান, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে কাজের একটু চাপ বেড়েছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। আগের ঈদগুলোতে একমাস আগে থেকে কাজ শুরু হতো। কিন্তু এবার আগের তুলনায় কাজকাম অনেক কম। নতুনের তুলনায় বেশিরভাগ পুরাতন কাজগুলোই করছি।
শঙ্কর চন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। হাতে আছে মাত্র কয়েক দিন। তবুও কাজের তেমন একটা চাপ নেই। আগের দিনে কাজের চাপে দম ফেলারও সময় পেতাম না। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করতাম সারাক্ষণ। ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত আমরা কাজ করছি। সারা বছরের উপার্জন এই কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করেই আমরা করে নিতাম। কিন্তু এবার তার চার আনাও দেখচ্ছি না।
দিলীপ চন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদে পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, দা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি।
চাপারকোনা হাটবাড়ী কামারপাড়ার মুসলিম কর্মকার আমিনুল ইসলাম জানান, এই গ্রামে ২০ হতে ২৫ জন কর্মকার রয়েছে। তারা সকলেই মুসলমান। আমাদের বাপ-দাদারা হিন্দুদের কাছ থেকে এই কাজটি শিখেছিলেন। তাদের কাছ থেকে আমরাও শিখেছি।
তিনি বলেন, এযাবৎকাল এ কর্ম দিয়েই সংসার চালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। সারা বছর কাজ না থাকায় ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। যাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না। একদিকে কয়লার দাম বেশি, আরেকদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সবমিলিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন