খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা নির্ণয় ও দমন করা হচ্ছে। ধান ক্ষেতের সুরক্ষায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এ প্রযুক্তির ব্যবহার। আলোক ফাঁদ মূলত ফসলে পোকার উপস্থিতি যাচাই করে। এটি ক্ষেতের পাশে নিয়মিত পেতে রাখলে অনেক পোকা আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। এটি পোকা নিয়ন্ত্রণে একটি যান্ত্রিক পদ্ধতিবিশেষ। আলোক ফাঁদ এ দেশে বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কৃষকরা সহজ মাধ্যম হিসেবে কীটনাশক ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কীটনাশক ব্যবহার না করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে একযোগে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদনও বাড়বে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন। এতে ধানক্ষেতে ক্ষতিকর কী ধরনের পোকা রয়েছে, তা শনাক্ত করার পাশাপাশি ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তা দমন করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই পদ্ধতি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে বেশ ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
মাটিরাঙ্গার চড়পাড়ার আমনের খেতে গিয়ে দেখা যায়, ধানের জমির পাশে তিনটি খুঁটি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক বাতি ঝুলানো হয়েছে। বাতির নিচে একটি বড় পাত্রে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি রাখা হয়েছে। বাতি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ফসলের জমির বিভিন্ন প্রজাতির পোকা এসে নিচে রাখা পাত্রের পানিতে পড়ে মরছে। এভাবেই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকা এবং উপকারী পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁদটি স্থাপন করে রাখলে ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব।
এদিকে উজ্জ্বল আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ধানের মাজরা পোকার মথ, বাদামি গাছফড়িং, শিষকাটা লেদা পোকা, ধানের পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, চুঙ্গি পোকা, গলমাছি, গান্ধিপোকা, সাদা ফড়িং, পাটের বিছাপোকা, উড়চুঙ্গা, কালো শোষক পোকা, ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার মথ, শুঁয়ো পোকাসহ বিভিন্ন ফসলের অনিষ্টকারী পোকা এসে আলোক ফাঁদে পড়ে মারা যায়।
তা ছাড়া যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই সেসব স্থানে চার্জার ও সোলারের বাতি দিয়ে কাজটি অনায়াসে করা হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, ‘পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। এতে কৃষকের কোনো খরচ হয় না। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক সহজে তার জমির বিভিন্ন পোকার তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি এটি দীর্ঘ সময়ে স্থাপন করে ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পারেন।’
উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয় জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, ‘উপজেলার ২২টির প্রতিটি ব্লকে কমপক্ষে ৫টি আলোক ফাঁদ স্থাপনের লক্ষ্যে নিয়মিত ধানক্ষেতে কাজ চলমান। কৃষক এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমিতে ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের উপস্থিতি সহজে অবগত হয়ে এটি দীর্ঘ সময়ে স্থাপন করে এসব দমন করা যায়। এতে করে ফসলের কোনো প্রকার প্রভাব পড়বে না। বরং ফসল উৎপাদন খরচ কমে যাবে ও ফসল হবে অনেকটা বিষমুক্ত।’
মন্তব্য করুন