স্কুলে ঢুকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও নেত্রী সামসাদ রানু ওরফে রাঙা ভাবির বিরুদ্ধে। পরে আজ বুধবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে প্রধান শিক্ষককে স্কুলের ভেতরে টানাহ্যাঁচড়া, চড়-থাপ্পড় ও স্যান্ডেল খুলে মারতে যান বলে অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, বুধবার বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিন ছিল। এ ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন ছিল। প্রথম পরীক্ষায় বিভিন্ন ঝামেলা থাকেই, এ জন্য মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। সেই সময় পরীক্ষার্থীরা মাঠে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলেও ছিল। তাই রানু রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে ধাক্কাধাক্কি করেছেন এবং কিছুটা মারধরও করেছেন।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বলেন, প্রশ্ন নিয়ে আমি স্কুলে প্রবেশ করার সময় বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে সামশাদ রানু আমার ওপর হামলা করে মারধর করেছেন। স্কুলের সব ছাত্রই আমার সন্তানের মতো। তার একা সন্তান রোদে আছে আর সবাইও ছিল। সবাই গাছের ছায়ায় ছিল। আমি স্কুলের প্রধান হয়ে কোনো ছাত্র রোদে কষ্ট করুক এটা আমি চাইব না। আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি। তিনি কেন আমাকে মারধর করলেন?
অভিযুক্ত সামসাদ রানু বলেন, আমার ছেলে ওই স্কুলে পড়ে। আমি ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাই, স্কুলের কক্ষ খোলা না থাকায় রোদের মধ্যে প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অন্যান্য অভিভাবকদের অনুরোধে সাড়ে ১০টার পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে আমি তাকে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি। তখন তিনি তালা খোলার কথা অস্বীকৃতি জানান।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা কখন শুরু হবে সেটা শিক্ষকদের ব্যাপার। শিক্ষার্থীরা কেন এই গরমের মধ্যে মাঠে থাকবে? শ্রেণিকক্ষ খুলে দিলেই তো তারা সেখানে থাকতে পারত। এই তীব্র গরমে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়ে যেতে পারে। আমি ৮০০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে শিক্ষককে বলেছি শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আপনাকে কক্ষ খুলতে হবে। এরপরই আমি তার জামার কলার ধরে টেনে নিয়ে কক্ষের তালা খুলিয়েছি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, সাবেক প্যানেল মেয়র সামসাদ রানু আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখী মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানের ওপর চড়াও হয়ে চড়-থাপ্পড় ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। যা অত্যন্ত জঘন্য কাজ হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সামসাদ রানুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন