আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি পচা-বাসি খাবার সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। এ ছাড়া যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তারা খাবার সরবরাহ না করে অন্য ব্যক্তি এ কাজে নিয়োজিত আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহে সাতদিন সকালের নাশতায় রোগীদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ১০০ গ্রাম পাউরুটি, দুটি কলা, একটি সেদ্ধ ডিম ও ৫০ গ্রামচিনি। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে দুটি কলা ও একটি পাউরুটি। সেদ্ধ ডিম দেওয়া হয় মাঝে মাঝে। সপ্তাহে চার দিন দুপুর ও রাতে ৫০ গ্রাম ডাল, ১৭৫ গ্রাম ওজনের মাছ ও বাকি তিন দিন ৩০০ গ্রাম মাংস দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ৫০ গ্রামের এক টুকরো মাছ এবং ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের মাংস দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিল মেসার্স কে বি কনস্ট্রাকশন । কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করছেন উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের মোস্তকিন মিয়া।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, রোগীদের জনপ্রতি খাবার তালিকায় সপ্তাহের শনিবার, সোমবার, বুধবার ও শুক্রবারে সকালের নাশতায় ১০০ গ্রাম পাউরুটি, ২টি কলা, ১টি সেদ্ধ ডিম, ৫০ গ্রাম চিনি । দুপুরে ও রাতের খাবারে ৪০০ গ্রাম চালের ভাত, ৫০ গ্রাম ডাল, ১৭৫ গ্রাম মাছ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের রোববার, মঙ্গলবার ও শুক্রবারে দুপুরে ও রাতের খাবারে রোগী প্রতি ৩০০ গ্রাম মাংস দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
তবে দরপত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা সকালে একটি পাউরুটি, দুটি কলা, দুপুরে ৫০ গ্রামের এক টুকরো মাছ, ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের মাংস সরবরাহ করছেন।
এ ছাড়া সকালে প্রতিদিন একটি করে সেদ্ধ ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়ই পচা মাছ রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে।
সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বাবুল মিয়া (৭০) নামে এক বয়োবৃদ্ধ রোগী দুপুরের খাবার খেতে বসে অধিকাংশ খাবারই ফেলে দিচ্ছেন। খাবার কেন ফেলে দিচ্ছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘মোটা চালের ভাত, মাছে দুর্গন্ধ তাই খেতে পারছি না।’
মহিলা ওয়ার্ডের রোগী সালমা বেগম জানান, ‘সকালে ১টি গোল বনরুটি (গোল পাউরুটি) আর দুটি কলা দেওয়া হয়। দুপুর ২টায় দুপুরের খাবার ও বিকেল চারটায় রাতের খাবার দেওয়া হয়। তবে এগুলো খাওয়া যায় না।’
সরেজমিনে হাসপাতালে অবস্থানকালে বিকেল ৪ টায় রাতের খাবার দিতে আসেন রাঁধুনী আম্বিয়া খাতুন। তিনি জানান, ‘প্রতি রোগীর জন্য দুবেলায় ১০০ গ্রাম মাছ দেওয়া হয়। দুপুর আর রাতের তরকারি-ডাল একসঙ্গেই রান্না করি, শুধু ভাত দুবার রান্না করা হয়। তরকারি বিকেলে আবার গরম করি। আমাকে যা রান্না করতে দেওয়া হয় তাই রান্না করি।’
এ বিষয়ে জানতে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কে বি কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. মনছুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। কবে আমার লাইসেন্স ব্যাবহার করেছে কিংবা কখন তারা খাবার সরবরাহ শুরু করেছে এটি ও আমি জানি না। মোস্তাকিন আমার বিভিন্ন সাইটে কাজ দেখাশোনা করত।’
খাবার সরবরাহকারী মোস্তাকিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার রোগীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে সে হিসেবে বাজার কিনে বাবুর্চির কাছে পৌঁছে দেই। বাবুর্চি যদি কোনো অনিয়ম করে এর দায়ভার তো আমার না।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহরাব হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর ওনার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে এ বিষয়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি ওয়ার্ড ইনচার্জ দেখার কথা। যদি খাবারে অনিয়ম হয় তবে তিনি তা আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে জানাবেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন