পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ডুবোচরে নৌযান আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ফরিদপুর নদীবন্দর ব্যবহারকারীরা। অনতিবিলম্বে এ নৌবন্দরে প্রবেশের চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং না করা হলে বন্দরটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে জাহাজ কম আসায় রাজস্বও করতে শুরু করেছে বন্দরের। যদিও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
মেসার্স মুজিবুর রহমান এর প্রতিনিধি মো. আলাউদ্দিন শেখ, ঠিকাদার মো. ওয়াহিদসহ ব্যবসায়ীরা জানান, ফরিদপুরের একমাত্র নদীবন্দরটি দিয়ে চাউল, গম, সিমেন্ট, সিলেকশন বালিসহ প্রায় ৪০ ধরনের পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয়। চলতি শুকনো মৌসুমের শুরুতেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি অস্বাভাবিভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় বড় বড় জাহাজগুলো বন্দর পর্যন্ত আসতে পারছে না। এতে সংকটে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
নুর ফার্মা জাহাজের মাস্টার মো. সাদেক মোল্লা, তানিসা জাহাজের মাস্টার মো. মিন্টু, জাহাজ চালক মো. ইকরামসহ বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজের অন্যান্য নাবিক-শ্রমিকরা জানান, একটি জাহাজ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পানির ১০ থেকে ১২ ফুট গভীরতা প্রয়েজন হলেও এই চ্যানেলের কোথাও কোথাও তা চার থেকে ছয় ফুটে নেমে এসেছে, ফলে বড় জাহাজগুলো ঘাটে আসতে পারছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। দিনের পর দিন নদীর মধ্যে জাহাজ নোঙর করে রাখতে হচ্ছে, এতে সময় ব্যয় হচ্ছে কয়েকগুণ।
এই বন্দরে পণ্য খালাসে কাজ করেন সহস্রাধিক শ্রমিক। শ্রমিক সর্দার মো. রঘু সর্দার, ট্রাক চালক মহিদসহ শ্রমিকরা জানান, বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে পথে বসতে হবে তাদের। এ ছাড়া জাহাজগুলো ঘাটে ভিড়তে না পারায় চালকসহ অন্যদেরও ব্যবসায়ীকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন তারা।
ঘাটসংশ্লিষ্ট ডিক্রির চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান মিন্টু পকির জানান, এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও অদ্যবদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ড্রেজিং কাজ শুরু না হলে কিছু দিনের মধ্যেই বন্দর অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা। তারা জানান, এরই মধ্যে নিয়মিত আদায়ের রাজস্বও কমতে শুরু করেছে বন্দরটির।
যদিও দ্রততম সময়ের মধ্যে এ অবস্থা নিরসনে আশ্বাস দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহ্সান তালুকদার। তিনি জানান, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি এ বন্দর দিয় বিপুল পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী আনা হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করানো যায়।
উল্লেখ্য, পদ্মা নদীর ফরিদপুরের সিএ্যান্ডবি ঘাটকে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’ ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুর নদী বন্দর হিসেবে ইজারা প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন