দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এমপি প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার গণমুক্তি জোট থেকে সংসদ সদস্য হতে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। শনিবার তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি। গণমুক্তি জোট থেকে এমপি প্রার্থী হওয়া ওই নারীর নাম মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারা গ্রামে। তিনি পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে রোকেয়ার বাড়িতে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তার মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মাইয়াডা লইয়া চারজনের সংসার। মাইয়াডার আয় রোজগার দিয়ে চলে সংসার। বহু শখ কয়রা বিয়া দিছিলাম। হেই সংসারও টিকল না। এহন হুনি মাইয়া এমপি প্রার্থী দাঁড়াইছে...। আমার মেয়েকে তার দুলাভাই এমপি পদে দাঁড় করিয়েছে। তারাই সব খরচ দেবে। আমরা এত টাকা কোথায় পাব। আমার মেয়ের কষ্টের টাকায় দুই বেলা খেয়ে বেঁচে আছি।’
আরও জানা যায়, প্রার্থী হওয়া মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগমের পারিবারিকভাবে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর এলাকায় ফারুক মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় ১২ বছর আগে। তার ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এক মেয়ে পড়ে শিশু শ্রেণিতে। গত দুই বছর ধরে স্বামী পরিবারের কোনো যোগাযোগ রাখেন না। এমতবস্থায় দুই বছর ধরে মায়ের সঙ্গে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় বসবাস করছেন রোকেয়া। কখনও ক্লিনিকে কখনও অন্যের বাসায় কাজ করে চলে সংসার এমনটাই জানায় তার পরিবার। তার মা আরও বলেন, ‘আগে হালুয়াঘাটে ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করত, এখন পাশের সেবা নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করে। সেখানে চার হাজার টাকা দেয়; এই দিয়ে কোনো মতে চলে সংসার। দেখতাচুন যে জায়গাটা এটা সরকারি জায়গা, খাস জায়গা। মতে সংসার চলে আমার মেয়ের স্বামী দুই বাচ্চা রেখে চলে গেছে। একমাত্র আমার মেয়ের আয় দিয়ে কোনো মতে দুই নাতিকে নিয়ে সংসার চলছে। কয়েক দিন আগে রাত্রে কল আসে আমার মেয়ের কাছে তোমার এলাকার নাম দেও এবং তোমার পুরো নাম বলো। তারপর থেকে শুনতেছি আমার মেয়েকে না কি এমপি দাঁড় করাইছে, আমার মেয়ে এমপি দাঁড়াবে কেমনে।’
এমপি প্রার্থী হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ননাসের জামাই হামিদুল ইসলাম গণমুক্তিজোটে রাজনীতি করেন। গত কয়েক দিন আগে আমাকে কল দেন তিনি। পরে তিনি এমপি হওয়ার বিষয়ে আমাকে জানান। অনুরোধ করেন। আমার সব খরচ তিনিই বহন করবেন। আমি তাকে বলছেলিাম, আমি তো আওয়ামী লীগের কর্মী। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো সমস্যা হবে কি না? তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গেইে আছি। তোমার কোনো সমস্যা নেই। পড়ে আমার সব কাগজপত্র তিনিই রেডি করে আমাকে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেন। আমি নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতাম। এখানে সেখানে কাজ করে সংসার চালাই।’ কারও প্ররোচনায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন কি না বা কেউ ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রার্থী করিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছায় প্রার্থী হয়েছি। আমি আশাবাদী মানুষ আমাকে সমর্থন করবে। আমি সবার কাছে দোয়া ও ভোট চাই। তবে স্থানীয়রা এমপি প্রার্থী হওয়াটা খেলার ছলে নিছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, সে তো নিজে ভাতি খেতে পারে না; এমপি প্রার্থীর খরচ বহন করবে কীভাবে? কেউ বলে এই নারীকে এমপি হিসেবে দাঁড় করাইয়া দিল, এহন হেরা চলব কেমনে?’
বোয়ালমারা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, ‘রোকেয়ার স্বামী দীর্ঘদিন আগে তাকে রেখে চলে যায়। অভাবের কারণে যেখানে তার সংসার চলে না সেখানে সে কীভাবে এমপি প্রার্থী হয়েছে তা আমার জানা নেই। তাকে কোনো দিন রাজনীতি বা জনসেবা করতেও দেখিনি। এটা আমাদের কাছে খুবই বিব্রতকর।’
আরেক বাসিন্দা ছালাম মিয়া বলেন, ‘আমার জানা মতে তিনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করেন। সকালে বের হন, রাতে বাসায় ফিরেন। নিজের কোনো থাকার জায়গা নেই। সরকারি খাস জায়গায় ছনের ঘরে থাকেন। এভাবে চাইলেই যে এমপি প্রার্থী হওয়া যায় তা দেখে আমরা এলাকাবাসী সত্যিই খুব অবাক হয়েছি।’
এ বিষয়ে কথা হয় সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক নাজমুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মোছাম্মৎ রোকেয়া পূর্বে ইনসাফের পরিচন্নতার কাজ করতেন। এখন তিনি অন্য অন্যের বাড়িতে পরিচন্নতার কাজ করেন। আমার এখানেও মাঝে মধ্যে কাজ করেন। তিনি এই অফিসের নিয়োগকৃত কর্মচারী নন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা গণমুক্তি জোটের সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি নতুন দল। আমারা তৃণমূলে পরিচিতি বাড়াতে প্রতিটি আসনে প্রার্থী করিয়েছি। ময়মনসিংহ-১ আসনের প্রার্থী আমার ছোট বোন। তিনি গরিব মানুষ। আপনাদেরও সহযোগিতা কামনা করি।’
মন্তব্য করুন